ঢাকা ০৫:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

চলনবিলে নির্বিচারে মাছ ধরায় বংশবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:৪৪:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ অক্টোবর ২০২২
  • / ৪৫৬ বার পড়া হয়েছে

চলনবিলে জেলেদের জালে ধরা পড়া দেশীয় প্রজাতির মাছ

বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মোঃ শামছুর রহমান শিশির :

দেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিলের মাঠ, ঘাট, জনপদ ও প্লাবন ভ‚মি থেকে বন্যার পানি করতোয়া, বড়াল, নন্দকুজা, গুমানী, বেশানী, ভদ্রাবতী, হুরাসাগর, ধলাই, ফুলজোড়, আত্রাই, চাকলাইসহ সকল নদ-নদী, খাল-বীল ও জলাশয় থেকে দ্রæত বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে। ফলে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা চলনবিলাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ জলাশয় আবারো স্থলভাগে রূপ নিচ্ছে। জেগে ওঠা স্থলসীমার আকার ও পরিধি ক্রমশঃ প্রসারিত হওয়ায় এসব স্থান থেকে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মা ও পোনা মাছ নদ-নদীতে নেমে আসছে। এতে দেশের সর্ববৃহৎ মৎসভান্ডার খ্যাত চলনবিলের নদ-নদী ও জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের পোনা ও ডিমওয়ালা মাছের আনাগোনা বেড়েছে। এই সুযোগে এ অঞ্চলের বেশ কিছু অসাধু জেলে অতি ক্ষুদ্র ছিদ্রওয়ালা বাদাই জাল, মশুরি জাল, অবৈধ কারেন্ট জাল, চায়না দোয়ারসহ বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা নির্বিচারে নিধনের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। প্রতিদিন ব্যাপক পরিমানে দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাছ অসাধু জেলেদের জালে ধরা পড়ায় দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিজ্ঞ মহল। দেশীয় প্রজাতির মাছের সর্ববৃহৎ অভয়াশ্রম চলনবিলে নির্বিচারে দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাছ নির্বিচারে নিধন বন্ধ করা না গেছে শুষ্ক মৌসুমে দেশীয় প্রজাতির মাছের আকাল দেখা দিতে পারে বলেও বিজ্ঞমহল শংকা প্রকাশ করেছেন। চলনবিল থেকে সংগৃহিত নানা দেশীয় প্রজাতির মাছ দেশে মিঠা পানির মাছের চাহিদার একটা বৃহৎ অংশ পূরণ করে আসছে।

মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, চলনবিল অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের নদ-নদী, খাল-বীলে পলি ও বালি জমে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাষকের ব্যবহার, দেশীয় মাছ চাষে অনীহা, মৎস্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়াসহ নানা কারণে মাছের খনি চলনবিল থেকে ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে বিভিন্ন দেশীয় জাতের মাছ । তার পরেও ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’এর মতো বর্তমানে ব্যাপকভিত্তিতে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন অব্যাহত থাকায় ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের মাছ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ পরিলক্ষিত না হওয়ায় চলনবিলে অসাধু জেলেদের দোর্দন্ড প্রতাপ ক্রমেই বেপোরোয়া হয়ে উঠছে।

জানা গেছে, দেশীয় প্রজাতির মাছের সর্ববৃহৎ অভয়াশ্রম ও মাছের খনি হিসাবে পরিচিত শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, ফরিদপুর, চাটমোহর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুরসহ বৃহত্তর চলনবিল থেকে বন্যার পানি নামতে থাকায় এ অঞ্চলের নদী-নালা ও খাল বীলে ব্যাপক হারে দেশীয় প্রজাতির নানা পোনা ও ডিমওয়ালা মা মাছ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলে জেলেদের কারেন্ট, বাদাই, চায়না দোয়ার ও মশুড়ি জালে কৈ, মাগুর, শিং, টাকি, বোয়াল, শোল, চিতল, ফলুই, রুই, মৃগেল, টেংরা, চিংড়ি, বেলে, বায়েম, গোচি মাছসহ প্রচুর পরিমানে দেশীয় প্রজাতির নানা ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ প্রতিদিন ধরা পড়ছে। নির্বিচারে নিধনকৃত ওইসব মাছ এ অঞ্চলে মাছের চাহিদা মিটিয়েও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন পাঠানো হচ্ছে বড় বড় মাছের চালানের মাধ্যমে। দেশীয় প্রজাতির মাছকে ঘিরে এ অঞ্চরের মাছের ব্যবসা বর্তমানে জমজমাট হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে ভীড় করছেন চলবিলের নদ-নদী, খাল-বীল পাড়ের অসংখ্য মৎস্য আড়তে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ‘সংশ্লিষ্ট বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সাথে চলনবিলাঞ্চলের জেলেদের যোগসাজশে অবৈধ জাল ও নৌকা প্রতি মাসিক মাসোহারার ভিত্তিতে চলছে এ অপকর্ম। ফলে মাছের বংশবৃদ্ধি কার্যক্রম মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’

এলাকাবাসী জানায়, এভাবে চলনবিলে অবাধে দেশীয় প্রজাতির মা ও পোনা মাছ নির্বিচারে নিধন অব্যাহত থাকায় ‘চিরায়ত ‘মাছে ভাতে বাঙ্গালী’ কাথাটি ধীরে ধীরে কল্পবাক্যে পরিণত হচ্ছে। চলনবিল থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমানে পোনা ও মা মাছ নিধন করে শুটকি করেও সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। আর এসব কারণে ইতিমধ্যেই বৃহত্তর চলনবিলাঞ্চলসহ দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে প্রায় ৫১ জাতের দেশীয় প্রজাতির মাছ। এ তথ্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া দেশীয় প্রজাতির মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শংকর, ভেদা, পাশা, পানিরুই, বাটাকাতল, শিলং, দুই প্রজাতির টেংরাসহ নানা দেশীয় প্রজাতির মাছও রয়েছে বলে জানা গেছে।

চলনবিলাঞ্চলে বসবাসকারীদের অনেকেই জানান, অতীতে শুষ্ক মৌসুমে চলনবিলাঞ্চল এলাকায় বোয়াল থেকে শুরু করে রই, কাতলা, টেংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ প্রচুর পরিমানে পাওয়া যেতো। কিন্তু, বেশ কয়েক বছর হলো তার ব্যাতিক্রম চিত্র দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে অসময়ে অবৈধ জাল দিয়ে নির্বিচারে ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা নিধনকেই এলাকাবাসী দায়ী করেছেন। ফলে এ অঞ্চলে মাছের বংশবৃদ্ধি মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

মৎস্য বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে চলনবিল থেকে মাছ ধরা কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখা হলে দেশের মাছের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদশিক মুদ্রা অর্জন করা যেতে পারে। কেননা মিঠা পানির মাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব নোনা পানির মাছের চাইতে অনেক বেশী। চলনবিলাঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে মৎস্য চাষের মাধ্যমে শাহজাদপুরসহ বৃহত্তর চলনবিলের হাজার হাজার জেলেদের কর্মসংস্থানের পথ সুগম করার পাশাপাশি তাদের অধিক আয়েরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর বিদেশে বিপুল পরিমান মিঠা পানির মাছ রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির ভীতকেও আরও সুসংগঠিত ও মজবুত করে তোলা সম্ভব হবে। দেশে মাছের ও পুষ্টির চাহিদা পুরণের জন্য দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও পরিকল্পিত মাছ চাষের স¤প্রসারণ অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। সেইসাথে চলনবিলাঞ্চলের দেশীয় প্রজাতি মাছের অভয়াশ্রমগুলো থেকে নির্বচারে ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাছ নিধন বন্ধেরও কোন বিকল্প নেই বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এ অঞ্চলের সচেতন ও বিজ্ঞমহল।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

চলনবিলে নির্বিচারে মাছ ধরায় বংশবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ

আপডেট সময় : ১০:৪৪:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ অক্টোবর ২০২২

মোঃ শামছুর রহমান শিশির :

দেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিলের মাঠ, ঘাট, জনপদ ও প্লাবন ভ‚মি থেকে বন্যার পানি করতোয়া, বড়াল, নন্দকুজা, গুমানী, বেশানী, ভদ্রাবতী, হুরাসাগর, ধলাই, ফুলজোড়, আত্রাই, চাকলাইসহ সকল নদ-নদী, খাল-বীল ও জলাশয় থেকে দ্রæত বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে। ফলে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা চলনবিলাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ জলাশয় আবারো স্থলভাগে রূপ নিচ্ছে। জেগে ওঠা স্থলসীমার আকার ও পরিধি ক্রমশঃ প্রসারিত হওয়ায় এসব স্থান থেকে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মা ও পোনা মাছ নদ-নদীতে নেমে আসছে। এতে দেশের সর্ববৃহৎ মৎসভান্ডার খ্যাত চলনবিলের নদ-নদী ও জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের পোনা ও ডিমওয়ালা মাছের আনাগোনা বেড়েছে। এই সুযোগে এ অঞ্চলের বেশ কিছু অসাধু জেলে অতি ক্ষুদ্র ছিদ্রওয়ালা বাদাই জাল, মশুরি জাল, অবৈধ কারেন্ট জাল, চায়না দোয়ারসহ বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা নির্বিচারে নিধনের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। প্রতিদিন ব্যাপক পরিমানে দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাছ অসাধু জেলেদের জালে ধরা পড়ায় দেশীয় প্রজাতির মাছের বংশবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিজ্ঞ মহল। দেশীয় প্রজাতির মাছের সর্ববৃহৎ অভয়াশ্রম চলনবিলে নির্বিচারে দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাছ নির্বিচারে নিধন বন্ধ করা না গেছে শুষ্ক মৌসুমে দেশীয় প্রজাতির মাছের আকাল দেখা দিতে পারে বলেও বিজ্ঞমহল শংকা প্রকাশ করেছেন। চলনবিল থেকে সংগৃহিত নানা দেশীয় প্রজাতির মাছ দেশে মিঠা পানির মাছের চাহিদার একটা বৃহৎ অংশ পূরণ করে আসছে।

মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, চলনবিল অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের নদ-নদী, খাল-বীলে পলি ও বালি জমে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাষকের ব্যবহার, দেশীয় মাছ চাষে অনীহা, মৎস্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়াসহ নানা কারণে মাছের খনি চলনবিল থেকে ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে বিভিন্ন দেশীয় জাতের মাছ । তার পরেও ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’এর মতো বর্তমানে ব্যাপকভিত্তিতে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন অব্যাহত থাকায় ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের মাছ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ পরিলক্ষিত না হওয়ায় চলনবিলে অসাধু জেলেদের দোর্দন্ড প্রতাপ ক্রমেই বেপোরোয়া হয়ে উঠছে।

জানা গেছে, দেশীয় প্রজাতির মাছের সর্ববৃহৎ অভয়াশ্রম ও মাছের খনি হিসাবে পরিচিত শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, তাড়াশ, রায়গঞ্জ, ফরিদপুর, চাটমোহর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুরসহ বৃহত্তর চলনবিল থেকে বন্যার পানি নামতে থাকায় এ অঞ্চলের নদী-নালা ও খাল বীলে ব্যাপক হারে দেশীয় প্রজাতির নানা পোনা ও ডিমওয়ালা মা মাছ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলে জেলেদের কারেন্ট, বাদাই, চায়না দোয়ার ও মশুড়ি জালে কৈ, মাগুর, শিং, টাকি, বোয়াল, শোল, চিতল, ফলুই, রুই, মৃগেল, টেংরা, চিংড়ি, বেলে, বায়েম, গোচি মাছসহ প্রচুর পরিমানে দেশীয় প্রজাতির নানা ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ প্রতিদিন ধরা পড়ছে। নির্বিচারে নিধনকৃত ওইসব মাছ এ অঞ্চলে মাছের চাহিদা মিটিয়েও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন পাঠানো হচ্ছে বড় বড় মাছের চালানের মাধ্যমে। দেশীয় প্রজাতির মাছকে ঘিরে এ অঞ্চরের মাছের ব্যবসা বর্তমানে জমজমাট হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে ভীড় করছেন চলবিলের নদ-নদী, খাল-বীল পাড়ের অসংখ্য মৎস্য আড়তে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ‘সংশ্লিষ্ট বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সাথে চলনবিলাঞ্চলের জেলেদের যোগসাজশে অবৈধ জাল ও নৌকা প্রতি মাসিক মাসোহারার ভিত্তিতে চলছে এ অপকর্ম। ফলে মাছের বংশবৃদ্ধি কার্যক্রম মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’

এলাকাবাসী জানায়, এভাবে চলনবিলে অবাধে দেশীয় প্রজাতির মা ও পোনা মাছ নির্বিচারে নিধন অব্যাহত থাকায় ‘চিরায়ত ‘মাছে ভাতে বাঙ্গালী’ কাথাটি ধীরে ধীরে কল্পবাক্যে পরিণত হচ্ছে। চলনবিল থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমানে পোনা ও মা মাছ নিধন করে শুটকি করেও সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। আর এসব কারণে ইতিমধ্যেই বৃহত্তর চলনবিলাঞ্চলসহ দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে প্রায় ৫১ জাতের দেশীয় প্রজাতির মাছ। এ তথ্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া দেশীয় প্রজাতির মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শংকর, ভেদা, পাশা, পানিরুই, বাটাকাতল, শিলং, দুই প্রজাতির টেংরাসহ নানা দেশীয় প্রজাতির মাছও রয়েছে বলে জানা গেছে।

চলনবিলাঞ্চলে বসবাসকারীদের অনেকেই জানান, অতীতে শুষ্ক মৌসুমে চলনবিলাঞ্চল এলাকায় বোয়াল থেকে শুরু করে রই, কাতলা, টেংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ প্রচুর পরিমানে পাওয়া যেতো। কিন্তু, বেশ কয়েক বছর হলো তার ব্যাতিক্রম চিত্র দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে অসময়ে অবৈধ জাল দিয়ে নির্বিচারে ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা নিধনকেই এলাকাবাসী দায়ী করেছেন। ফলে এ অঞ্চলে মাছের বংশবৃদ্ধি মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

মৎস্য বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে চলনবিল থেকে মাছ ধরা কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখা হলে দেশের মাছের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদশিক মুদ্রা অর্জন করা যেতে পারে। কেননা মিঠা পানির মাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব নোনা পানির মাছের চাইতে অনেক বেশী। চলনবিলাঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে মৎস্য চাষের মাধ্যমে শাহজাদপুরসহ বৃহত্তর চলনবিলের হাজার হাজার জেলেদের কর্মসংস্থানের পথ সুগম করার পাশাপাশি তাদের অধিক আয়েরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর বিদেশে বিপুল পরিমান মিঠা পানির মাছ রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির ভীতকেও আরও সুসংগঠিত ও মজবুত করে তোলা সম্ভব হবে। দেশে মাছের ও পুষ্টির চাহিদা পুরণের জন্য দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও পরিকল্পিত মাছ চাষের স¤প্রসারণ অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। সেইসাথে চলনবিলাঞ্চলের দেশীয় প্রজাতি মাছের অভয়াশ্রমগুলো থেকে নির্বচারে ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাছ নিধন বন্ধেরও কোন বিকল্প নেই বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এ অঞ্চলের সচেতন ও বিজ্ঞমহল।