ঢাকা ০৬:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৭ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

চট্টগ্রামে কমছে ভারি বৃষ্টি, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:৫০:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৩
  • / ৫১৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অনলাইন ডেস্ক : আকস্মিক বন্যায় তাই পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন তিন জেলার কয়েক লাখ মানুষ। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার বা বান্দরবানে বন্যা হতে পারে এমন ধারণাই ছিল না আবাহাওয়া অধিদপ্তর বা বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের। চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান বা কক্সবাজার মহাসড়কে এখনও হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি।

কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। টেকনাফ ও চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সাত উপজেলার বেশিরভাগই পানির নিচে। এদিকে, বৃষ্টি কমার পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া থেকে দুই শিশুসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। শহরাঞ্চল থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে নিুাঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গা এখনো ডুবে আছে। নতুন করে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আবারও পানি বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে, পানি কমতে শুরু করলেও এখনও দুর্ভোগ কাটেনি মানুষের। এখনও শহরে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও সুপেয় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিক হয়নি যান চলাচল।

এদিকে, টানা ৭ দিনের বৃষ্টিতে বান্দরবান শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ বসতবাড়ি, সরকারি অফিস, বাসভবন, বাজার ডুবে যায়। এছাড়া সড়কে কোমর সমান পানি হওয়ায় চলাচল বন্ধ হয়ে যায় জনসাধারণের চলাচল। তবে বৃধবার তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কমতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত শহর থেকে পানি নেমে গেছে। তবে এখনো প্লাবিত রয়েছে নিুাঞ্চল।

সকালে শহরে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় জমে আছে কাদামাটি। কোথাও কোথাও পাহাড় ধসে রাস্তায় পড়ে রয়েছে মাটির স্তুপ। শহরে অভ্যন্তরীণ সড়ক ছাড়া কোথাও যান চলাচল নেই।

জেলায় রোববার থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সেবা বিঘিœত হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করছে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন।

কক্সবাজারের সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নের দুইশ গ্রাম বন্যায় প্লাবিত। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ ও চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় রোহিঙ্গা আশ্রয় ক্যাম্পে কাজ করছে সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন।

এদিকে, বৃষ্টি না থাকায় খাগড়াছড়িতে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে লোকজন বাড়ি-ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতিতে পানি নামায় জেলার দীঘিনালায় আড়াই শতাধিক পরিবার এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। সাজেকসহ রাঙ্গামাটির দুই উপজেলা বাঘাইছড়ি ও লংগদুর সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন। পানিবন্দী মানুষের দুর্গতির পাশাপাশি, পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। শাক-সবজিসহ ফসলের জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এক সপ্তাহের টানা বর্ষণ শেষে কমেছে বৃষ্টি। বন্যার পানি ওঠায় বন্ধ থাকা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে আবার যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমায় বিভিন্ন জায়গার জলজট সরে যাচ্ছে। নামিয়ে ফেলা হয়েছে সতর্ক সংকেত। পরিস্থিতির উন্নতি আশা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এদিকে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে। পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে কয়েকশ গ্রাম। সাত উপজেলার অধিকাংশই এলাকা এখন পানির নিচে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে দেড় শতাধিক স্কুল দুর্গতদের আশ্রয়ের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। পাহাড় ধসে অভ্যন্তরীন সড়কে মাটি পড়ে যাওয়ায় জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

পানি নামতে শুরু করায় ফেনীতেও বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।

হঠাৎ করে কেন এই বন্যা—জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই বন্যার আগাম কোনো সতর্কতা ছিল না। এটা সব সময় হয় না। গত ২৫ থেকে ৩০ বছরে এই এলাকায় এমন বন্যা হয়নি। কারণ, হিসেবে আমরা যেটা দেখেছি, সাগরে একটা গভীর নিম্নচাপ ছিল, যেটা পরে সমতল ভূমির ওপর দিয়ে গেছে। এটা ছিল ৩১ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর ৩ আগস্ট ছিল পূর্ণিমা। পূর্ণিমার সময় জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বাড়ে। এর সঙ্গে আছে বৃষ্টি। আমরা দেখলাম, গত তিন দিনে বান্দরবানে ৮০০ মিলিলিটার বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামে দুই দিন ৪৬০ মিলিলিটার বৃষ্টি হয়েছে। একসঙ্গে এত বৃষ্টি হলে পানি নামতে সমস্যা হয়। তখন সেটা সমতলে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোর সঙ্গে তো যেসব জলাধার আগে পানি ধরে রাখতো সেগুলো বন্ধ করে নগরায়ন হয়েছে। আবার নদীর তলদেশে পলি জমে পানি এখন আর নিচে যেতে পারে না। ফলে উপরে সেটা ছড়িয়ে পড়ছে। এর বাইরে জলবায়ুর পরিবর্তন তো আছেই।’

অতি ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গত সোমবার (৭ আগস্ট) রাত থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় পানি বাড়তে শুরু করে। সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ ডুবে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে কক্সবাজার ও বান্দরবানের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দুদিনেও যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি।

চট্টগ্রামে কমছে ভারি বৃষ্টি, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘বান্দরবানের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ১২ হাজারের মতো মানুষ উঠেছেন। তাদের নিয়মিত খাবার দেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সহায়তায় আমরা সব জায়গাতেই খাদ্য সামগ্রী পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। বান্দরবানের লামা ও সদর উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লামায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। আর সদরে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ এলাকা। এখন এসব জায়গা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।’

সঠিকভাবে ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে কি না, জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ৭০ লাখ টাকা, ২১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৭০০ মেট্রিক টন চাল দুর্গত এলাকায় পৌঁছে দিয়েছি। সেগুলো বিতরণ চলমান আছে। খাবার পাচ্ছে না এমন কেউ নেই। আমরা রান্না করা খাবারও বিতরণ করছি। আমরা সব সময় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমেই ত্রাণ বিতরণ করি। দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছানো হচ্ছে। আমরা বেশি আক্রান্ত তিনটি জেলাসহ পাঁচ জেলায় ত্রাণ দিয়েছে। কারণ, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে বন্যা হয়েছে, তবে সেটা খুব বেশি না।’

বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়ছে। এরমধ্যে পাহাড় ধসে ও ঘর চাপা পড়ে পাঁচজন মারা গেছেন।

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান বলেন, ‘আপাতত আর পাহাড় ধসের আশঙ্কা নেই। পরিস্থিতি উন্নতির দিকে হলেও অনেক বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেশি সহায়তার দাবি করা হয়েছে। আজও ১০ লাখ টাকা, তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১০০ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দিয়ে পাঠিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও টেলিফোনে আমাদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখছেন। তিনি সহায়তা বাড়ানোর দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১১ আগস্ট চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার লোহাগড়া, কক্সবাজারের চকরিয়ার পেকুয়া ও বান্দরবানের রুমা উপজেলা পরিদর্শনে যাব।’

নিউজটি শেয়ার করুন

চট্টগ্রামে কমছে ভারি বৃষ্টি, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

আপডেট সময় : ১২:৫০:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : আকস্মিক বন্যায় তাই পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন তিন জেলার কয়েক লাখ মানুষ। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার বা বান্দরবানে বন্যা হতে পারে এমন ধারণাই ছিল না আবাহাওয়া অধিদপ্তর বা বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের। চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান বা কক্সবাজার মহাসড়কে এখনও হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি।

কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। টেকনাফ ও চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের সাত উপজেলার বেশিরভাগই পানির নিচে। এদিকে, বৃষ্টি কমার পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া থেকে দুই শিশুসহ তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। শহরাঞ্চল থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে নিুাঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গা এখনো ডুবে আছে। নতুন করে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আবারও পানি বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে, পানি কমতে শুরু করলেও এখনও দুর্ভোগ কাটেনি মানুষের। এখনও শহরে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও সুপেয় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিক হয়নি যান চলাচল।

এদিকে, টানা ৭ দিনের বৃষ্টিতে বান্দরবান শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ বসতবাড়ি, সরকারি অফিস, বাসভবন, বাজার ডুবে যায়। এছাড়া সড়কে কোমর সমান পানি হওয়ায় চলাচল বন্ধ হয়ে যায় জনসাধারণের চলাচল। তবে বৃধবার তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কমতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত শহর থেকে পানি নেমে গেছে। তবে এখনো প্লাবিত রয়েছে নিুাঞ্চল।

সকালে শহরে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় জমে আছে কাদামাটি। কোথাও কোথাও পাহাড় ধসে রাস্তায় পড়ে রয়েছে মাটির স্তুপ। শহরে অভ্যন্তরীণ সড়ক ছাড়া কোথাও যান চলাচল নেই।

জেলায় রোববার থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সেবা বিঘিœত হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করছে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন।

কক্সবাজারের সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নের দুইশ গ্রাম বন্যায় প্লাবিত। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ ও চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় রোহিঙ্গা আশ্রয় ক্যাম্পে কাজ করছে সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন।

এদিকে, বৃষ্টি না থাকায় খাগড়াছড়িতে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে লোকজন বাড়ি-ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতিতে পানি নামায় জেলার দীঘিনালায় আড়াই শতাধিক পরিবার এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। সাজেকসহ রাঙ্গামাটির দুই উপজেলা বাঘাইছড়ি ও লংগদুর সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন। পানিবন্দী মানুষের দুর্গতির পাশাপাশি, পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। শাক-সবজিসহ ফসলের জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এক সপ্তাহের টানা বর্ষণ শেষে কমেছে বৃষ্টি। বন্যার পানি ওঠায় বন্ধ থাকা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে আবার যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমায় বিভিন্ন জায়গার জলজট সরে যাচ্ছে। নামিয়ে ফেলা হয়েছে সতর্ক সংকেত। পরিস্থিতির উন্নতি আশা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এদিকে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে। পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে কয়েকশ গ্রাম। সাত উপজেলার অধিকাংশই এলাকা এখন পানির নিচে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে দেড় শতাধিক স্কুল দুর্গতদের আশ্রয়ের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। পাহাড় ধসে অভ্যন্তরীন সড়কে মাটি পড়ে যাওয়ায় জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

পানি নামতে শুরু করায় ফেনীতেও বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।

হঠাৎ করে কেন এই বন্যা—জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই বন্যার আগাম কোনো সতর্কতা ছিল না। এটা সব সময় হয় না। গত ২৫ থেকে ৩০ বছরে এই এলাকায় এমন বন্যা হয়নি। কারণ, হিসেবে আমরা যেটা দেখেছি, সাগরে একটা গভীর নিম্নচাপ ছিল, যেটা পরে সমতল ভূমির ওপর দিয়ে গেছে। এটা ছিল ৩১ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর ৩ আগস্ট ছিল পূর্ণিমা। পূর্ণিমার সময় জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বাড়ে। এর সঙ্গে আছে বৃষ্টি। আমরা দেখলাম, গত তিন দিনে বান্দরবানে ৮০০ মিলিলিটার বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামে দুই দিন ৪৬০ মিলিলিটার বৃষ্টি হয়েছে। একসঙ্গে এত বৃষ্টি হলে পানি নামতে সমস্যা হয়। তখন সেটা সমতলে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোর সঙ্গে তো যেসব জলাধার আগে পানি ধরে রাখতো সেগুলো বন্ধ করে নগরায়ন হয়েছে। আবার নদীর তলদেশে পলি জমে পানি এখন আর নিচে যেতে পারে না। ফলে উপরে সেটা ছড়িয়ে পড়ছে। এর বাইরে জলবায়ুর পরিবর্তন তো আছেই।’

অতি ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গত সোমবার (৭ আগস্ট) রাত থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় পানি বাড়তে শুরু করে। সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ ডুবে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে কক্সবাজার ও বান্দরবানের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দুদিনেও যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি।

চট্টগ্রামে কমছে ভারি বৃষ্টি, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘বান্দরবানের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ১২ হাজারের মতো মানুষ উঠেছেন। তাদের নিয়মিত খাবার দেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সহায়তায় আমরা সব জায়গাতেই খাদ্য সামগ্রী পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। বান্দরবানের লামা ও সদর উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লামায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। আর সদরে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ এলাকা। এখন এসব জায়গা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।’

সঠিকভাবে ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে কি না, জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ৭০ লাখ টাকা, ২১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৭০০ মেট্রিক টন চাল দুর্গত এলাকায় পৌঁছে দিয়েছি। সেগুলো বিতরণ চলমান আছে। খাবার পাচ্ছে না এমন কেউ নেই। আমরা রান্না করা খাবারও বিতরণ করছি। আমরা সব সময় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমেই ত্রাণ বিতরণ করি। দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছানো হচ্ছে। আমরা বেশি আক্রান্ত তিনটি জেলাসহ পাঁচ জেলায় ত্রাণ দিয়েছে। কারণ, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে বন্যা হয়েছে, তবে সেটা খুব বেশি না।’

বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়ছে। এরমধ্যে পাহাড় ধসে ও ঘর চাপা পড়ে পাঁচজন মারা গেছেন।

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান বলেন, ‘আপাতত আর পাহাড় ধসের আশঙ্কা নেই। পরিস্থিতি উন্নতির দিকে হলেও অনেক বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেশি সহায়তার দাবি করা হয়েছে। আজও ১০ লাখ টাকা, তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১০০ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দিয়ে পাঠিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও টেলিফোনে আমাদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখছেন। তিনি সহায়তা বাড়ানোর দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১১ আগস্ট চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার লোহাগড়া, কক্সবাজারের চকরিয়ার পেকুয়া ও বান্দরবানের রুমা উপজেলা পরিদর্শনে যাব।’