গোদাগাড়ীতে গবাদিপশু পালনে আগ্রহী হচ্ছে মানুষ
মোঃ হায়দার আলী, নিজস্ব প্রতিবেদক
- আপডেট সময় : ০৭:০১:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৬১৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ
(Google News) ফিডটি
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে জনবল সংকট থাকলেও মানুষের দৌড় গোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছেন চিকিৎসা সেবা। এটা সম্ভাব হয়েছে সদ্য যোগদানকারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শায়লা শারমিন কারণে।
তিনি গত ১১/১০/ ২৯২৩ ইং তারিখে গোদাগাড়ীতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেই অফিসে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন। নিজে সময়মত অফিসে আসেন, অন্যদের সময়মত অফিসে আসা, যাওয়া ও দায়িত্ব পালনের পরামার্শ দেন। অফিস পরিস্কার পরিচ্ছন্নের কাজটি প্রথমে শুরু করেন। দীর্ঘ দিন থেকে জমে থাকা ময়লা আর্বাজনা, অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলেন। অফিসের সামনে ঝোঁপ, জঙ্গল পরিস্কার করেন। অফিসের আঙ্গিনায় নতুন করে বিভিন্ন উন্নতজাতের ঘাস রোপন, যানবাহন রাখার সেড নির্মান, গাভীকে বীজ দেয়ার সেডসহ স্বল্প সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন।
গোদাগাড়ীর বিভিন্ন এলাকা ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গবাদিপশুর চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মানুষকে যেন দুর্ভোগ ও হয়রানিতে পড়তে না হয় সে দিকে তিনি গভীরভাবে নজর দেন। তিনি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে প্রায় বলেন, জনগনের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন ভাতা হয়, জনগনকে আমাদের সঠিক সেবা দিতে হবে। এটা সবাইকে মতে রাখতে হবে।
গবাদিপশুর চিকিৎসা নিতে আসা গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিশালবাড়ী মহল্লার মোঃ নূরুল ইসলাম, আতিকুর রহমান ও মামুন বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শায়লা শারমিনের আচার ব্যবহার খুবই ভাল, সুন্দর করে কথা বলেন, ঔষুধ লিখে বুঝিয়ে দেন। যেটা আগে এরকম পায়নি। ভাজনপুর গরুর চিকিৎসা নিতে আসা শ্রী দুলুদেব বলেন, গরুর নিয়ে এসে গরুর চিকিৎসা পেয়েছি ম্যাডাম ঔষুধও দিয়েছেন। বিভিন্ন প্রকল্পের প্রশিক্ষনের ক্লাসে ডাঃ শায়লা শারমিন সুন্দরভাবে ক্লাসে উপস্থাপনা, বিভিন্ন প্রশ্নের সুন্দরভাবে গুছিয়ে উত্তর দেয়ার কারণে মাসিক সঞ্চয় এক লাফে ১শ’ টাকা ২শ’ টাকা, ২শ টাকা থেকে ৪শ’ টাকা স্বেচ্ছায় সদস্যরা করেছেন বসে সদস্য মামুম ও জোহরুন নেসা এ প্রতিবেদককে জানান।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সুব্রত কুমার সরকার বদলী হওয়ার পর থেকে অফিসের লোকবল সংকট, নানা অনিয়মের কারণে অফিসের কর্মকর্তার কর্মচারীদের চেন অফ কমান্ড ভেঙে পড়েছিল, গবাদিপশুর চিকিৎসা ব্যহত হচ্ছিল, মানুষ গবাদিপশুর চিকিৎসা নিতে এসে হররানির শিকার হতো, এ নিয়ে স্থানীয়, জাতীয়, অনলাইন পত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে ডাঃ শায়লা শারমিন যোগদান করার পর থেকে দৃশ্যপট পাল্টিয়ে যেতে শুরু করেছে। স্বল্প সময়ে সাধারন মানুষের আস্তা অর্জন করতে শুরু করেছেন । তিনি মহিলা হয়েও সাহসী পদক্ষেপ গ্রহন করেন। গত ১২ নভেম্বর পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকার আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চর আমতলায়র ফ্রি ভেটেরিনারি মেডিকেল সেবা প্রদান করেন। সে দিন ’শ’শ নারী পুরুষ, কিশোর কিশোরী তাদের গরু, ছাগল, ভেড়া নিয়ে হাজির হয়, ফ্রি চিকিৎসাসেবা পরামার্শ গ্রহন করেন। তিনি অফিসে চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি জরুরী বাড়ীতে, খামারে গিয়েও চিকিৎসা ও পরামার্শ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে যে সব কর্মকতা কর্মচারিগণ করেন কাজ করেন তাদের তদারকি করেন, মাঠ থেকে কোন কোন কর্মচারি কিংবা গ্রাম্য চিকিৎসক ম্যাডামকে মোবাইল করলে তিনি মোবাইল ধরেন এবং চিকিৎসা বিষয়ে পরামার্শ দেন বলে জানান, বুলবুল ও নূরুল ইসলাম।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন প্রথম শ্রেণির একজন কর্মকতা এ প্রতিবেদককে জানান, চার মাস আগে আমি অফিসে এসেছিলাম, অপরিস্কার, গন্ধে, অফিসে অবস্থান করা কষ্টকর ছিল। এখন ওই অফিস এত পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন, সাজানো গুছানো। সত্যিই প্রশাংসা করতে হয় ডাঃ শায়লা শারমিন ম্যাডামের।
গোদাগাড়ী একটি বৃহত্তর উপজেলা, এখানে গবাদিপশুর সংখাও অনেক বেশী। এখানে গাভীর খামারের সংখ্যা ৬শ’ ৩ টি, ছাগলের খামারের সংখ্যা ১ শ ৬০ টি, ভেড়ার খামার ৬৪ টি, হাঁসের খামার ১ শ ৬১ টি, লেয়ার মুরগির খামার ১২ টি, ব্রয়লার মুরগির খামার ২ শ ১৯ টি, কবুতরের খামার ২৯ টি, কোয়েল পাখির খামারের সংখ্যা ২ টি, গরু মোটাতাজাকরন খামার ২ শ ৫০ টি, মহিষের খামার ১ শ ৮০ টি, পশু খাদ্য দোকান ১১ টি।
গরুর সংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬ শ ২৫ টি, দেশী জাতের ১ লাখ, ৬৯ হাজার ২ শ ৬৬ টি, শংকর জাতের ৬৫ হাজার ৩ শ ৯০ টি, মহিষ ১৩ হাজার৪ শ ৪৪ টি, ছাগল ৩ লাখ
৫ হাজার ৯ শ ৯ টি, দেশী জাতের ১ লাখ ৬১ হাজার ৪ শ ৫০ টি, উন্নত জাতের১ লাখ ৪৪ হাজার ৪ শ ৫৯ টি, ভেড়া ১৭ হাজার ৬ শ ১১ টি, পাতিহাাঁস ৪৮ হাজার ৫২ টি, রাজহাঁস ১২ হাজার ২ শ ২২ টি, মোরগ- মুরগি ৪ লাখ ৬৬ হাজার ১ শ ৫৯ টি, দেশী জাতের ১ লাখ ৫৬ হাজার, ৬ শ ৫৯ টি শংকর জাতের ২ লাখ ৯ হাজার ৫ শ টি, কতুতর ১৪ হাজার ৭ ২০ টি, শূকর ৫ শ ১৫ টি।
এ ব্যপারে ৩ ডিসেম্বর, রবিবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটের সময় অফিসে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা শাইলা সারমিন ইমুর সাথে কথা হয়। তিনি জানান, সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের দর্পণ, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তাই সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিকতা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনে। সংবাদপত্রের যাত্রা যথেষ্ট প্রচীন হলেও বিংশ শতাব্দিতে সংবাদপত্র বিভিন্ন দেশীয় আন্তজাতিক পরিমন্ডলে বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ন ভূমিকা পালন করেছিল, বর্তমানেও করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ওয়াটার গেট কেলেংকারী সংশ্লষ্ট সাংবাদিকতার গভীর তাৎপর্যপূর্ন নিয়ামকের ভূমিকা পালন করেছিল। বাংলাদেশের সাংবাদিকগণ তাৎপর্যপূর্ন ইতিবাচক ভূমিকার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাই
সাংবাদিক ভাই আমি যদি ভাল কাজ করি লিখবেন, খারাপ কাজ, অনিয়ম, দুনীতি করি সেটাও অবশ্যই লিখবেন। আমরা সংশোধন হবো। আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই, মানুষের উপকার, গবাদিপশুর সেবা দেয়ার জন্য এখানে এসেছি, জনসাধারনের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন ভাতা হয়। তাদের সেবা দিব না কেন?
রাজশাহী জেলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মোঃ আখতার হোসেনের সাথে যোগাযোগ হলে তিনি জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, অবসর জনিত কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বিষয়টি নিয়ে মহাপরিচালক মহোদয়ের সাথে কথা বলেছিলাম, নতুন লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় পর গোদাগাড়ীসহ বিভিন্ন উপজেলায় নতুন অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে আর কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। সমস্যা হলে লিখবেন।
এদিকে গবাদিপশু পালনকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ডা. সাইফুল ইসলাম, ডা. সুব্রত কুমার সরকার গোদাগাড়ীতে কর্মরত অবস্থায় প্রাণিসম্পদের বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন, মানুষ তাদের কথা শুনে বুঝে গবাদিপশু পালনে আগ্রহী হয়েছিলেন। সে সময় গবাদিপশু পালন করে বেশ লাভবান হয়েছিলেন অনেকে। এখন আবার সে অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করছে তবে কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানান সচেতন মহল।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন বড় খামারি জানান, এখন খামারে পালিত গরুর কোনো সমস্যা দেখা দিলে প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করলে অফিস থেকে লোক খামারে এসে চিকিৎসা সেবা ও পরামার্শ দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কয়েক মাস পূর্বে এ অবস্থা ছিল না।