কাশফুল জানান দিচ্ছে এখন শরৎ কাল
- আপডেট সময় : ০৯:৫৩:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ৫৭২ বার পড়া হয়েছে

// শফিউল আযম //
ভাদ্র -আশ্বিন এই দুই মাস শরৎ কাল। শরৎ মানেই মেঘের খেলা আর কাশফুলের দোলা। কবিগুরু লিখেছেন, “চিকচিক করে বালি,কোথা নাই কাদা/ এক ধারে কাশ বন ফুলে ফুলে সাদা/কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক/ রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাক”। নদী তীরে শ্বেত শুভ্র কাশফুল, চিকচিক বালি, প্রজাপতি ,শালিকের ঝাঁক আর শেয়ালের হাক সবই যেন শরতের অবদান। ঘর হতে শুধু দু-পা ফেলে আপনি প্রকৃতিকে খেয়াল করুন, তাহলে বুঝবেন এক অপরুপ সাজে সেজেছে রুপসী বাংলা। নান্দনিক এদৃশ্য থাকবে ভাদ্র-আশ্বিণ জুড়ে। যদিও ভাদ্র পেড়িয়ে গেছে। এবছর ভাদ্রে ছিল আষাঢ়ের গর্জন। যেখানে শরতের নীলাকাশে সাদা মেঘের ভেলা থাকার কথা ছিল। কাশফুলই প্রকৃতিতে বর্ষা বিদায় আর শরতের আগমন জানান দেয় । এ ফুল পালকের মতো ধবধবে সাদা। নির্মেলেন্দু গুন এ ফুলকে শরৎ রানী বলে ডাকেছেন,” শরত রানী যেন কাশের বোরখা খানি খুলে/কাশ বনের ওই আড়াল থেকে নাচছে দুলে দুলে।”
রুপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ শরৎকে মুগ্ধতায় দেখেছেন, “বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি/ তাই পৃথিবীর রুপ খূঁজিতে যাই না আর।” সত্যই শরতের কাশফুলের শুভ্রতা সবার মনকে ছুঁয়ে দেয়। পল্লী কবির ভাষায়, “সব ভুলে মেতে উঠি শরতের প্রাতে, কাঁশবনে কাঁশবনে/ হাসি খেলায় সখীদের সনে/ সই পাতালো কি শরত আজিকে স্নিগ্ধ আকাশ ধরণী?/ নীলিমা বাহিয়া সওগাত নিয়া নামিছে মেঘের তরণী!/ অলকার পানে বলাকা ছুটিছে,মেঘ-দুত-মন মোহিয়া!”
কাশফুলের কাব্য কবিতার পংতিমালা,” প্রথম কবে ফুটেছে কাশ সেই শুধুরা জানে/ তাইতো সেটা সবার আগে খোঁপায় বেঁধে আনে/ ইচ্ছে করে ডেকে বলি, ”ওগো কাশের মেয়ে-/আজকে আমার চোখ জুড়ালো তোমার দেখা পেয়ে/ তোমার হাতে বন্দী আমার ভালোবাসার কাশ /তাইতো আমি এই শরতে তোমার কৃতদাস/ ভালোবাসা কাব্য শুনে কাশ ঝরেছে যেই/ দেখি আমার শরত রানী কাশবনে আর নেই।” নীল আকাশের নিচে মৃদুমন্দ বাতাসে কাশফুলের দোলা দেখলে মনে হয় শ্বেত বাসনা একঝাক পরীর নৃত্য ।
কাশফুল মূলত বহুবর্ষজীবী ছন জাতীয় ঘাস উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Sacchrum Spontanum, এ গাছের চিরল পাতার দু-পাশেই ধারালো । উচ্চতায় তিন মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। নদীর তীর , জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোন উঁচু জায়গায় কাশবন গড়ে উঠে। তবে নদীর তীরে পলিমাটির আস্তর থাকায় মাটিতে কাশের মূল সহজে বিস্তার লাভ করে বনের সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কম-বেশী কাশফুল দেখতে পাওয়া যায়। নদী মাতৃক এদেশে প্রায় সব নদী তীরে বা তাদের চরাঞ্চালে কাশফুল ফোটে। ঠান্ডা ও বালি মেশানো মাটিতে এদের বেশি পাওয়া যায়। তবে এরা যে ভ’মিতে জন্মে সে অঞ্চল পুরোপুরি গ্রাস করে ফেলে।
কাশগাছ গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শুকনো কাশগাছ দিয়ে গ্রামীণ বধুরা ঝাঁটা , মাদুর , ডালি তৈরী করে। কৃষকের মাথাল, ঘরের চাল ,বাড়ীর সীমানা প্রাচীর ও তৈরী করেন অনেকে। এগাছের মূলের রস পিত্তথলীর পাথর দুর করে। কাশফুল বেটে চন্দনের মতো নিয়মিত গায়ে মাখলে দূর্গন্ধ দুর হয়। এছাড়া ব্যাথা নাশক ফোঁড়ার চিকিৎসায় কাশের মূল চুর্ণ ব্যবহৃত হয়। কাশফুলের অন্য এক প্রজাতীর নাম ”কুশ”। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র পুরাণে কুশের উল্লেখ আছে। তাই তাদের অনেকে বিশ্বাস করে কাশফুল মনের কালিমা দুর করে। শুভ কাজে তারা অনেক সময় কাশের ফুল ও পাতা ব্যবহার করে।
কাশবন এখন আর খুব বেশি চোখে পড়ে না। এ বছর যেখানে শরতের নীল আকাশই চোখে পড়েনি। ছিল প্রচন্ড তাপদাহ আর মাঝে মাঝে বৃষ্টি। ভাদ্র মাসেও মনে হয়েছে বর্ষা কাল। মূলত: জলবায়ুর পরিবর্তন, নদীর তীর দখল হয়ে যাওয়া এবং জ্বলানি হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ার কারনে কাশফুল দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রকৃতির ভারসাম্য আর সৌন্দর্য প্রেমিদের জন্য শরত রানী থাকুক দিগন্ত বিস্তৃত।