ঢাকা ১১:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কাজীপুরে ভাসমান পাটের হাট

আশরাফুল আলম, কাজীপুর (সিরাজগঞ্জ)
  • আপডেট সময় : ০৩:১৭:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ৪৮৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল নাটুয়ারপাড়া। এর কোল ঘেঁষে বয়ে চলা প্রমত্তা যমুনায় জটলা বাধা অনেকগুলো নৌকা। এই নৌকাতেই বসেছে পাটের হাট। নদীপথে ক্রেতা- বিক্রেতাদের যাতায়াত সুবিধার কারণে ভাসমান এ হাট সরগরম হয়ে ওঠে ভোর থেকেই। চলে বেলা এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত। শত বছর ধরে বসছে নাটুয়ারপাড়ার ব্যতিক্রমী এ হাটটি। দূরদূরান্ত থেকে নৌকা যোগে এ ভাসমান পাটের হাটে পাট কেনা বেচা করতে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। নৌকার পাশাপাশি নদীপাড়েও প্রচুর পাট কেনা বেচা হয়। তবে গত কয়েক বছরের তুলনয় এবার পাটের দাম অনেক কম । সপ্তাহের দুদিন শনি ও বুধবার বসে এ হাট।

গত বুধবার শনিবার সরেজমিন ওই ভাসমান পাটের হাটে গিয়ে দেখা গেছে, কাজীপুরসহ পার্শ্ববর্তী জামালপুরের সরিষাবাড়ি, মাদারগঞ্জ, টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর, বগুড়ার ধুনট, শেরপুর, সারিয়াকান্দির ক্রেতা বিক্রেতারা ভাসমান এই হাটে পাট কেনা-বেচা করতে এসেছেন নৌকা যোগে। তীর থেকে ১শ’ গজ ফাঁকে নোঙর ফেলে নৌকা থামিয়ে অর্ধশতাধিক নৌকায় কেনা বেচা হচ্ছে পাট। নৌকাতেই হাঁকডাক চলছে। বিক্রেতাদের কাছ থেকে পাট কিনে অন্য নৌকায় উঠিয়ে নিচ্ছেন ব্যাপারিরা। নৌকার পাশাপাশি চরাঞ্চলের একমাত্র পরিবহন ঘোড়ার গাড়িতেও পাট বোঝাই করে স্থানীয় কৃষকরা পাট বিক্রি করতে আসেন।

মোন্নাত হোসেন নাটুয়ারপাড়ার ভাসমান এ পাটের হাটে পাট বিক্রি করতে এসেছেন বগুড়ার সারিয়াকান্দি থেকে। তিনি জানান, ‘চার বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। ১৬শ’ থেকে ২১শ’ টাকা মণ পাট বিক্রি করেছেন। পাটের দাম খুব কম।’

সোনাতোলার চাষি আলমগীর বলেন, ‘পাট কাটা ও ধোয়ার কামলার দাম বেশী। পাটের দাম খুব কম। ৭ মণ পাট ১৫শ’ টাকা মণ বিক্রি করছি । খরচা ওঠাই জুলুম। পাট কাটার পর পানির অভাবে জাঁক দিতে দেরি হয়েছিল। তাই পাটের মানও খারাপ একটু খারাপ ছিল।’

ভাসমান এ হাটে পাট কিনতে এসেছেন জামালপুরের ব্যাপারি হবিবর রহমান। তিনি বলেন, ‘এখানে বহু পাট ওঠে। নৌপথে যাতায়াত খরচ কম তাই এখানে আছি। আজকে ৩১২ মণ পাট কিনছি। আগের থেকে অনেক কম দাম। এগুলো আবার নৌকাতেই নিয়ে যাবো।’

সারিয়াকান্দির ধারাবাইশ্যার ব্যাপারি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘প্রতি বছরই এ হাটে পাট কিনতে আসি। এখানে দাম কিছুটা কম পাওয়া যায়। যাতায়াত খরচাও কম।’

নাটুয়ারপাড়া হাটের ইজারাদার ও কাজীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেফাজ উদ্দিন মাস্টার বলেন, ‘দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যাপারিরা প্রয়োজনে এখানে থাকতেও পারবেন। আগস্ট থেকে শুরু হয়ে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত এখানে পাটের হাট বসে। প্রতি হাটে ৭ থেকে ৯ হাজার মণ পাট কেনা বেচা হয়।’

কাজীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, ‘এবার অতিরিক্ত খরার কারণে পাটের আবাদে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়েছি। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় জাঁক দিতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তারপরও মোটমুটি বিঘা প্রতি আট-নয় মণ পাট পেয়েছেন কৃষকরা।’

কাজীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কুমার দত্ত জানান, ‘ডাকাতি এড়াতে হাটের দিন যমুনায় পুলিশের বিশেষ টহল থাকে। আমরা যে কোন ধরণের সেবা দিতে প্রস্তুত।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

কাজীপুরে ভাসমান পাটের হাট

আপডেট সময় : ০৩:১৭:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল নাটুয়ারপাড়া। এর কোল ঘেঁষে বয়ে চলা প্রমত্তা যমুনায় জটলা বাধা অনেকগুলো নৌকা। এই নৌকাতেই বসেছে পাটের হাট। নদীপথে ক্রেতা- বিক্রেতাদের যাতায়াত সুবিধার কারণে ভাসমান এ হাট সরগরম হয়ে ওঠে ভোর থেকেই। চলে বেলা এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত। শত বছর ধরে বসছে নাটুয়ারপাড়ার ব্যতিক্রমী এ হাটটি। দূরদূরান্ত থেকে নৌকা যোগে এ ভাসমান পাটের হাটে পাট কেনা বেচা করতে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। নৌকার পাশাপাশি নদীপাড়েও প্রচুর পাট কেনা বেচা হয়। তবে গত কয়েক বছরের তুলনয় এবার পাটের দাম অনেক কম । সপ্তাহের দুদিন শনি ও বুধবার বসে এ হাট।

গত বুধবার শনিবার সরেজমিন ওই ভাসমান পাটের হাটে গিয়ে দেখা গেছে, কাজীপুরসহ পার্শ্ববর্তী জামালপুরের সরিষাবাড়ি, মাদারগঞ্জ, টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর, বগুড়ার ধুনট, শেরপুর, সারিয়াকান্দির ক্রেতা বিক্রেতারা ভাসমান এই হাটে পাট কেনা-বেচা করতে এসেছেন নৌকা যোগে। তীর থেকে ১শ’ গজ ফাঁকে নোঙর ফেলে নৌকা থামিয়ে অর্ধশতাধিক নৌকায় কেনা বেচা হচ্ছে পাট। নৌকাতেই হাঁকডাক চলছে। বিক্রেতাদের কাছ থেকে পাট কিনে অন্য নৌকায় উঠিয়ে নিচ্ছেন ব্যাপারিরা। নৌকার পাশাপাশি চরাঞ্চলের একমাত্র পরিবহন ঘোড়ার গাড়িতেও পাট বোঝাই করে স্থানীয় কৃষকরা পাট বিক্রি করতে আসেন।

মোন্নাত হোসেন নাটুয়ারপাড়ার ভাসমান এ পাটের হাটে পাট বিক্রি করতে এসেছেন বগুড়ার সারিয়াকান্দি থেকে। তিনি জানান, ‘চার বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। ১৬শ’ থেকে ২১শ’ টাকা মণ পাট বিক্রি করেছেন। পাটের দাম খুব কম।’

সোনাতোলার চাষি আলমগীর বলেন, ‘পাট কাটা ও ধোয়ার কামলার দাম বেশী। পাটের দাম খুব কম। ৭ মণ পাট ১৫শ’ টাকা মণ বিক্রি করছি । খরচা ওঠাই জুলুম। পাট কাটার পর পানির অভাবে জাঁক দিতে দেরি হয়েছিল। তাই পাটের মানও খারাপ একটু খারাপ ছিল।’

ভাসমান এ হাটে পাট কিনতে এসেছেন জামালপুরের ব্যাপারি হবিবর রহমান। তিনি বলেন, ‘এখানে বহু পাট ওঠে। নৌপথে যাতায়াত খরচ কম তাই এখানে আছি। আজকে ৩১২ মণ পাট কিনছি। আগের থেকে অনেক কম দাম। এগুলো আবার নৌকাতেই নিয়ে যাবো।’

সারিয়াকান্দির ধারাবাইশ্যার ব্যাপারি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘প্রতি বছরই এ হাটে পাট কিনতে আসি। এখানে দাম কিছুটা কম পাওয়া যায়। যাতায়াত খরচাও কম।’

নাটুয়ারপাড়া হাটের ইজারাদার ও কাজীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেফাজ উদ্দিন মাস্টার বলেন, ‘দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যাপারিরা প্রয়োজনে এখানে থাকতেও পারবেন। আগস্ট থেকে শুরু হয়ে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত এখানে পাটের হাট বসে। প্রতি হাটে ৭ থেকে ৯ হাজার মণ পাট কেনা বেচা হয়।’

কাজীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, ‘এবার অতিরিক্ত খরার কারণে পাটের আবাদে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়েছি। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় জাঁক দিতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তারপরও মোটমুটি বিঘা প্রতি আট-নয় মণ পাট পেয়েছেন কৃষকরা।’

কাজীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কুমার দত্ত জানান, ‘ডাকাতি এড়াতে হাটের দিন যমুনায় পুলিশের বিশেষ টহল থাকে। আমরা যে কোন ধরণের সেবা দিতে প্রস্তুত।’