কাজীপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি :
সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার একটি অগভীর নলকূপের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য নোটিশ প্রদান করেছে সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি -২। কিন্তু সেচ সংযোগ অব্যাহত রাখার দাবী জানিয়ে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি আবেদন করেছেন কৃষকরা। গণস্বাক্ষরযুক্ত এ আবেদন পত্রে শতাধিক কৃষক নলকূপটির পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন। উপজেলার গান্ধাইল ইউনিয়নের গান্ধাইল এলাকার অগভীর নলকূপ এটি।
সোমবার দুপুরে সরেজমিন ও দরখাস্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে গান্ধাইল গ্রামের কৃষক আল আমিন বিধি মোতাবেক একটি অগভীর নলকূপ স্থাপন করেন। সেখানে পূর্ব থেকেই ৮৫৪ ফুট দূরত্বে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) একটি গভীর নলকূপ দীর্ঘদিন যাবৎ অব্যবহৃত ছিলো। সব দেখেশুনেই কর্তৃপক্ষ আল আমিনকে ওই অগভীর নলকূপের সংযোগটি প্রদান করেন। তখন থেকেই প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে সেচ দিয়ে আসছিলেন তিনি। কিন্তু গত বছর একই এলাকার গোলাম হোসেন নামের এক ব্যক্তি ওই গভীর নলকূপটি চেয়ে আবেদন করেন। পরে কর্তৃপক্ষ তার আবেদন মঞ্জুর করেন এবং সংযোগ প্রদান করেন। এরপরই গোলাম হোসেন আল আমিনের অগভীর নলকূপটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বিএডিসি ও পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ৭ ফেব্রæয়ারি সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা জানিয়ে আল আমিনকে একটি পত্র প্রদান করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, গত ২২ ডিসেম্বরের উপজেলা সেচ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে ওই অগভীর নলকূপের সংযোগটি আর বহাল রাখা যাবে না।
অগভীর নলকূপের মালিক আল আমিন জানান, ‘গত ১৩ বছর ধরে আমি জমিতে সেচ দিচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে কৃষকদের কোন অভিযোগ নাই। তারপরও আমার লাইন কেটে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমার সেচপাম্প থাকলে কোনই অসুবিধা হবে না বরং চাষাবাদে উপকারে আসবে।’
ওই এলাকার কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, ‘এই ভরা মৌসুমে বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিলে আমাগোরে ফসলের সমস্যা হইবো। আলামিনের সেচপাম্প থাকলে কোন সমস্যা নাই। আমাগোরে ফসলে ভালোই পানি সেচ দেয় সে। ’
আরেক কৃষক জয়নাল বলেন, ‘যিহিনে ভালো সেচ পামু সিহিন থাইকাই সেচ নিমু। এতে কার সমস্যা? আলামিন ভালো সেচ দেয় তার কাছ থাইকাই আমরা পানি নিমু।’
আব্দুস সাত্তার নামের আরেক জন বলেন, ‘গভীর নলকূপের মালিক সেচের আগেই টাকা চায়। টাকা না দিলে জমিতে পানি দিতে চায়না। আর আলামিনকে টাকা দিতে দেরি হলেও কিছু বলে না। আমরা তার কাছ থেকেই সেচ নিমু।’
কাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম সানোয়ার হোসেন জানান, ‘সেচ কমিটির চিঠি পাওয়ার পর আল আমিনকে চিঠি দিয়েছি। যাতে সে তার সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করেন। ’
কাজীপুর উপজেলা বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) তারেক আহমেদ জানান, ‘নিয়মানুযায়ী অগভীর নলকূপটি সরাতেই হবে। গভীর নলকূপ থেকে কৃষকরা সেচ সুবিধা নেবেন। ’
কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুখময় সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আবেদন পেয়েছি। তবে কিছুই করার নেই। অনেকদিন পর গভীর নলকূপটি চালু হয়েছে। তাই নিয়মানুযায়ী অগভীর নলকূপটি বন্ধ করতে হবে।
বা/খ: জই