ঢাকা ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কলাপাড়ায় লালুয়া ইউনিয়নে শের-ই-বাংলা নৌ-ঘাটি নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন

কলাপাড়া প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৫:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৫০৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নে বানৌজা শের-ই-বাংলা নৌ-ঘাটি নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য মঙ্গলবার দুপুরের দিকে প্রধানমন্ত্রী নিকট আবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এর কাছে হস্তাস্তর করা হয়েছে। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন, কলাপাড়া পরিবেশ ও জন সুরক্ষা মঞ্চের সদস্য এবং কলাপাড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি হুমায়ুন কবির, মঞ্চের সদস্য পরিবেশ কর্মী ও দৈনিক জনকন্ঠের কলাপাড়া প্রতিনিধি মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. নাহিদুল হক এবং যুব সংগঠন আমরা কলাপাড়াবাসীর সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম।

এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের প্রতিনিধি হাওয়া বেগম, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. নাছির তালুকদার, নিজাম প্যাদা, মো. নাজমুল তালুকদার, কহিনূর বেগম, নূর ইসলাম রিক্তা ইসলামসহ প্রমুখ।

এ সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা বানৌজা শের-ই-বাংলা নৌঘাঁটির জন্য চলমান জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের এবং বসবাসকারী ভূমিহীন পরিবারের জন্য কলাপাড়ায় নির্মানাধীন অন্যান্য বৃহৎ প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্থদের ন্যায় পুনর্বাসনের দাবী জানান।

তারা বলেন, আমরা জমির মালিকরা আমাদের ঘর-বাড়ি জমি-জমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে চলেছি। তখন খোলা আকাশের নিচে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করা ছাড়া আমাদের কোন বিকল্প থাকবে না।  প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে স্থান দিয়ে বিশ্ব দরবারে মানবতার যে নজির স্থাপন করেছেন, সেখানে আমাদের প্রায় ৬০০ পরিবারের কমপক্ষে ২৪০০ সন্তানের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চয়ই করবেন বলে আশাকরি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ক্ষতিগ্রস্থদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তাদেরকে আশ্বস্ত করেন যে, এই আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং পুনর্বাসনের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, পর্যটন সমৃদ্ধ সাগর তীরবর্তী দক্ষিণের জনপদ এই উপজেলায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। কলাপাড়ার মানুষের প্রধান পেশা কৃষি কাজ, মাছ ধরা ও ব্যবসা। নয়নাভিরাম এ উপজেলায় বর্তমানে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কিছু প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে পায়রা বন্দরসহ দেশের জলসীমার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নে বানৌজা শের-ই-বাংলা নৌঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছে। এই নৌঘাঁটি নির্মাণের উদ্দেশ্যে লালুয়া ইউনিয়নের গোলবুনিয়া মৌজা থেকে প্রথম পর্যায়ে ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। যেখানে মোট ৪১টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পরবর্তীতে গোলবুনিয়া এবং বানাতি মৌজা থেকে আরও ৬২০ একর জমির অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান আছে। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান এলাকায় জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৬০০ পরিবার।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কলাপাড়ায় বৃহৎ প্রকল্পের মধ্যে পায়রা বন্দরের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকদের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ ৩,৪২৩ টি পরিবারকে পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। পাশাপাশি পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্ত ১৩০টি পরিবারকে স্বপ্নের ঠিকানা নামক পুনর্বাসন কেন্দ্রে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (আরএনপিএল) এর ক্ষতিগ্রস্ত ২৮১টি পরিবারের জন্য ‘আনন্দপল্লী’ এবং ‘স্বপ্ননীড়’ নামে দুইটি পুনর্বাসন কেন্দ্রের নির্মাণ করা হয়েছে। একইসাথে পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট সুপারথার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র (আশুগঞ্জ) নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ১৮০টি পরিবারের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু বানৌজা শের-ই-বাংলা নৌঘাঁটি নির্মাণের জন্য প্রথম পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থ ৪১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়নি। একইসাথে বর্তমানে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক আমাদের প্রায় ৬০০ পরিবারকে পুনর্বাসন করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। অন্য দিকে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান এলাকায় অসংখ্য ভূমিহীন পরিবার বেড়িবাঁধের ঢালে এবং অন্যের জমিতে বসবাস করেন যারা কোন ধরনের ক্ষতিপূরণ অথবা সহযোগীতা পাবেন না। এমতাবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পুনর্বাসনের কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হলে ভ‚মিহীন মুক্ত কলাপাড়ায় নতুন করে অসংখ্য পরিবার ভূমিহীন হয়ে পড়বে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

কলাপাড়ায় লালুয়া ইউনিয়নে শের-ই-বাংলা নৌ-ঘাটি নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন

আপডেট সময় : ০৬:৩৫:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০২৩

কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নে বানৌজা শের-ই-বাংলা নৌ-ঘাটি নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য মঙ্গলবার দুপুরের দিকে প্রধানমন্ত্রী নিকট আবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এর কাছে হস্তাস্তর করা হয়েছে। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন, কলাপাড়া পরিবেশ ও জন সুরক্ষা মঞ্চের সদস্য এবং কলাপাড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি হুমায়ুন কবির, মঞ্চের সদস্য পরিবেশ কর্মী ও দৈনিক জনকন্ঠের কলাপাড়া প্রতিনিধি মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. নাহিদুল হক এবং যুব সংগঠন আমরা কলাপাড়াবাসীর সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম।

এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের প্রতিনিধি হাওয়া বেগম, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. নাছির তালুকদার, নিজাম প্যাদা, মো. নাজমুল তালুকদার, কহিনূর বেগম, নূর ইসলাম রিক্তা ইসলামসহ প্রমুখ।

এ সময়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা বানৌজা শের-ই-বাংলা নৌঘাঁটির জন্য চলমান জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের এবং বসবাসকারী ভূমিহীন পরিবারের জন্য কলাপাড়ায় নির্মানাধীন অন্যান্য বৃহৎ প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্থদের ন্যায় পুনর্বাসনের দাবী জানান।

তারা বলেন, আমরা জমির মালিকরা আমাদের ঘর-বাড়ি জমি-জমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে চলেছি। তখন খোলা আকাশের নিচে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করা ছাড়া আমাদের কোন বিকল্প থাকবে না।  প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে স্থান দিয়ে বিশ্ব দরবারে মানবতার যে নজির স্থাপন করেছেন, সেখানে আমাদের প্রায় ৬০০ পরিবারের কমপক্ষে ২৪০০ সন্তানের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চয়ই করবেন বলে আশাকরি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ক্ষতিগ্রস্থদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং তাদেরকে আশ্বস্ত করেন যে, এই আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং পুনর্বাসনের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, পর্যটন সমৃদ্ধ সাগর তীরবর্তী দক্ষিণের জনপদ এই উপজেলায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। কলাপাড়ার মানুষের প্রধান পেশা কৃষি কাজ, মাছ ধরা ও ব্যবসা। নয়নাভিরাম এ উপজেলায় বর্তমানে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কিছু প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে পায়রা বন্দরসহ দেশের জলসীমার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নে বানৌজা শের-ই-বাংলা নৌঘাঁটি স্থাপন করা হয়েছে। এই নৌঘাঁটি নির্মাণের উদ্দেশ্যে লালুয়া ইউনিয়নের গোলবুনিয়া মৌজা থেকে প্রথম পর্যায়ে ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। যেখানে মোট ৪১টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পরবর্তীতে গোলবুনিয়া এবং বানাতি মৌজা থেকে আরও ৬২০ একর জমির অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান আছে। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান এলাকায় জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৬০০ পরিবার।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কলাপাড়ায় বৃহৎ প্রকল্পের মধ্যে পায়রা বন্দরের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকদের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ ৩,৪২৩ টি পরিবারকে পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। পাশাপাশি পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্ত ১৩০টি পরিবারকে স্বপ্নের ঠিকানা নামক পুনর্বাসন কেন্দ্রে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (আরএনপিএল) এর ক্ষতিগ্রস্ত ২৮১টি পরিবারের জন্য ‘আনন্দপল্লী’ এবং ‘স্বপ্ননীড়’ নামে দুইটি পুনর্বাসন কেন্দ্রের নির্মাণ করা হয়েছে। একইসাথে পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট সুপারথার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র (আশুগঞ্জ) নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ১৮০টি পরিবারের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু বানৌজা শের-ই-বাংলা নৌঘাঁটি নির্মাণের জন্য প্রথম পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থ ৪১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়নি। একইসাথে বর্তমানে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক আমাদের প্রায় ৬০০ পরিবারকে পুনর্বাসন করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। অন্য দিকে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান এলাকায় অসংখ্য ভূমিহীন পরিবার বেড়িবাঁধের ঢালে এবং অন্যের জমিতে বসবাস করেন যারা কোন ধরনের ক্ষতিপূরণ অথবা সহযোগীতা পাবেন না। এমতাবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পুনর্বাসনের কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হলে ভ‚মিহীন মুক্ত কলাপাড়ায় নতুন করে অসংখ্য পরিবার ভূমিহীন হয়ে পড়বে।