ঢাকা ০৪:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কলাপাড়ায় আমন ধানের স্বপ্ন বুনছেন সমুদ্র উপকূলের কৃষক

এ এম, মিজানুর রহমান বুলেট, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৩:৪১:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৪৬৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আমন ধানের স্বপ্ন বুননে শেষ সময়ের ব্যস্ততায় এখন দিন পার করছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কৃষকরা। প্রকৃতির বৈরীতায় এবার কিছুটা বিলম্বিত হলেও দেশের দক্ষিন সমুদ্র উপকূলের প্রত্যন্ত এলাকায় দল বেঁধে, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে জমিতে আমন ধানের চারা রোপন করতে দেখা গেছে কৃষককে। এতে দিগন্ত জুড়ে ক্রমশ : দৃশ্যমান হয়ে উঠছে আমন চারার সবুজ পাতার সমারোহ। এ বছর কলাপাড়া উপজেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৩০ হাজার ৭০০ হেক্টর। ইতিমধ্যে ২৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ শেষ করেছে কৃষকেরা। বৈরী আবহাওয়া কেটে যেতেই লক্ষ্যমাত্রার অবশিষ্ট জমিতে আগামী দু’চার দিনের মধ্যেই আমন চাষাবাদ শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। দেশের দক্ষিনাঞ্চলের দুর্যোগপ্রবন এ উপজেলায় প্রতিবছরই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমন ধানের বাম্পার ফলনে উচ্ছ্বসিত কৃষক। কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষককে সার্বক্ষনিক পরামর্শ দেয়ায় প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করেও কৃষিতে সফলতা পেয়েছে কৃষক।

তবে স্লুইসগেট আটকে প্রভাবশালীদের মাছ চাষে কৃষকের দু:শ্চিন্তা বাড়ে চাষাবাদ মৌসুমে। এতে কৃষি ক্ষেত থেকে অতি বর্ষন ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি নামানো এবং প্রয়োজনের সময় নদী-খালের পানি ওঠানো সম্ভব হয় না কৃষকের পক্ষে। এছাড়া চাষাবাদ মৌসুমে সিন্ডিকেট করে বিসিআইসি ও খুচরা ডিলাররা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী দামে সার, কীটনাশক বিক্রী করায় ঋনগ্রস্ত কৃষকের চোখে মুখে ফুটে ওঠে দু:শ্চিন্তার ছাপ। স্থানীয় কৃষি বিভাগের দাবী, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জনে সার্বক্ষনিক কৃষকের পাশে রয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষককে দেয়া হচ্ছে প্রনোদনার বীজ, সার। কৃষকের চাষাবাদ সংক্রান্ত যেকোন সমস্যা সমাধানে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে অবস্থান বাধ্যতামূলক। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে গ্রুপ করে কৃষি প্রশিক্ষনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে কৃষককে। অফিসেও দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষন। আগে যারা দিনমজুরীর কাজ করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতো, তারা এখন কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষন পেয়ে ধান চাষের পাশাপাশি পতিত জমিতে লাউ, কুমড়া, করলা, ঝিঙা, বরবটি, শষা সহ মৌসুম ভেদে বিভিন্ন সবজি চাষ করে সফলতা অর্জন করেছে। এতে স্বচ্ছলতা ফিরেছে তাদের পরিবারে। ফলে কৃষিতে আগ্রহ বেড়েছে বেকার যুবকদের।

সূত্রটি আরও জানায়, ঘূর্নিঝড় ’রেমাল’ পরবর্তী কিছু প্রয়োজন কর্মসূচীর আওতায় উপকূলের ১ হাজার ৮ শ ৯০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে জনপ্রতি ৫ কেজি ধানবীজ ও ২০ কেজি রাসায়নিক সার বিতরন করা হয়েছে। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রনোদনা কর্মসূচীর আওতায় ১ হাজার ২ শ’ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ৬ হাজার পিচ নারিকেল চারা বিতরন করা হয়েছে। এছাড়া কৃষককে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করতে চাষাবাদের জন্য ট্রাক্টর, কীটনাশক স্প্রে করার জন্য স্প্রে মেশিন, ফুট পাম্প, ধান কাটার জন্য হারভেষ্টার সুবিধা দেয়া হচ্ছে। উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের বিশকানি এলাকার কৃষক নসু সিকদার (৬৭) বলেন, এবছর ঘূর্নিঝড় রোমালের তান্ডব যেতে না যেতেই একের পর এক নিম্ন চাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি সহ অতিরিক্ত বৃষ্টিতে আমন বীজ তলা পঁচে গেছে। নতুন করে বীজ তলা তৈরী করে আবার ধানের চারা করতে হয়েছে। উপজেলার ধূলাসার ইউনিয়নের নতুনপাড়া এলাকার কৃষক ইদ্রিস গাজী (৫৫) বলেন, এবছর একর প্রতি জমি চাষাবাদে খরচ পড়েছে ১৫ হাজার টাকা। এখন জমির আগাছা নিধন সহ সার, কীন নাশক স্প্রে করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে সার, কীটনাশক বিক্রী করছেন ডিলাররা। চাপলি বাজারের খুচরা ডিলারের দোকান থেকে প্রতি বস্তা টিএসপি সার কিনতে হয়েছে ১৮০০ টাকা, ইউরিয়া ১৪০০ টাকা এবং ড্যাপ সার ১২০০ টাকা। এছাড়া কীটনাশকও কিনতে হয়েছে বেশী দামে। কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা আ. রহমান বলেন, কলাপাড়ায় এ বছর উফশী জাতের উচ্চ ফলনশীল আমন ধান বিআর-১১, বিআর-২২, বিআর-২৩, স্বর্নমুশুরী, ব্রী ধান-৪৯, ব্রী ধান-৫১, ব্রী ধান ৫২ চাষ হয়েছে শতকরা ৭০-৭৫ ভাগ। এছাড়া স্থানীয় জাতের সাক্ষরখানা, রাজাশাইল, কাজল শাইল, বিংগা মনি, সাদা মোটা, মাথা মোটা ও কুটি অগ্রানি জাতের আমন ধানের চাষ করেছেন কৃষক। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরাফাত হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষককে সার্বক্ষনিক সেবা দিচ্ছে। আমি নিজেও প্রতিদিন এক একটি গ্রামে গিয়ে কৃষি কাজ পরিদর্শন সহ কৃষকের সাথে কথা বলি। কৃষকের যেকোন সমস্যা দ্রুত সমাধানের উদ্দোগ নেই।
আরাফাত হোসেন আরও বলেন, সার ডিলারদের অফিস থেকে তদারকি করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী মূল্যে সার বিক্রীর সুযোগ নেই। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাখ//পিব

নিউজটি শেয়ার করুন

কলাপাড়ায় আমন ধানের স্বপ্ন বুনছেন সমুদ্র উপকূলের কৃষক

আপডেট সময় : ০৩:৪১:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আমন ধানের স্বপ্ন বুননে শেষ সময়ের ব্যস্ততায় এখন দিন পার করছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কৃষকরা। প্রকৃতির বৈরীতায় এবার কিছুটা বিলম্বিত হলেও দেশের দক্ষিন সমুদ্র উপকূলের প্রত্যন্ত এলাকায় দল বেঁধে, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে জমিতে আমন ধানের চারা রোপন করতে দেখা গেছে কৃষককে। এতে দিগন্ত জুড়ে ক্রমশ : দৃশ্যমান হয়ে উঠছে আমন চারার সবুজ পাতার সমারোহ। এ বছর কলাপাড়া উপজেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৩০ হাজার ৭০০ হেক্টর। ইতিমধ্যে ২৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ শেষ করেছে কৃষকেরা। বৈরী আবহাওয়া কেটে যেতেই লক্ষ্যমাত্রার অবশিষ্ট জমিতে আগামী দু’চার দিনের মধ্যেই আমন চাষাবাদ শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। দেশের দক্ষিনাঞ্চলের দুর্যোগপ্রবন এ উপজেলায় প্রতিবছরই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমন ধানের বাম্পার ফলনে উচ্ছ্বসিত কৃষক। কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষককে সার্বক্ষনিক পরামর্শ দেয়ায় প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করেও কৃষিতে সফলতা পেয়েছে কৃষক।

তবে স্লুইসগেট আটকে প্রভাবশালীদের মাছ চাষে কৃষকের দু:শ্চিন্তা বাড়ে চাষাবাদ মৌসুমে। এতে কৃষি ক্ষেত থেকে অতি বর্ষন ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি নামানো এবং প্রয়োজনের সময় নদী-খালের পানি ওঠানো সম্ভব হয় না কৃষকের পক্ষে। এছাড়া চাষাবাদ মৌসুমে সিন্ডিকেট করে বিসিআইসি ও খুচরা ডিলাররা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী দামে সার, কীটনাশক বিক্রী করায় ঋনগ্রস্ত কৃষকের চোখে মুখে ফুটে ওঠে দু:শ্চিন্তার ছাপ। স্থানীয় কৃষি বিভাগের দাবী, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জনে সার্বক্ষনিক কৃষকের পাশে রয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষককে দেয়া হচ্ছে প্রনোদনার বীজ, সার। কৃষকের চাষাবাদ সংক্রান্ত যেকোন সমস্যা সমাধানে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে অবস্থান বাধ্যতামূলক। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে গ্রুপ করে কৃষি প্রশিক্ষনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে কৃষককে। অফিসেও দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষন। আগে যারা দিনমজুরীর কাজ করে সংসার চালাতে হিমশিম খেতো, তারা এখন কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষন পেয়ে ধান চাষের পাশাপাশি পতিত জমিতে লাউ, কুমড়া, করলা, ঝিঙা, বরবটি, শষা সহ মৌসুম ভেদে বিভিন্ন সবজি চাষ করে সফলতা অর্জন করেছে। এতে স্বচ্ছলতা ফিরেছে তাদের পরিবারে। ফলে কৃষিতে আগ্রহ বেড়েছে বেকার যুবকদের।

সূত্রটি আরও জানায়, ঘূর্নিঝড় ’রেমাল’ পরবর্তী কিছু প্রয়োজন কর্মসূচীর আওতায় উপকূলের ১ হাজার ৮ শ ৯০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে জনপ্রতি ৫ কেজি ধানবীজ ও ২০ কেজি রাসায়নিক সার বিতরন করা হয়েছে। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রনোদনা কর্মসূচীর আওতায় ১ হাজার ২ শ’ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ৬ হাজার পিচ নারিকেল চারা বিতরন করা হয়েছে। এছাড়া কৃষককে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করতে চাষাবাদের জন্য ট্রাক্টর, কীটনাশক স্প্রে করার জন্য স্প্রে মেশিন, ফুট পাম্প, ধান কাটার জন্য হারভেষ্টার সুবিধা দেয়া হচ্ছে। উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের বিশকানি এলাকার কৃষক নসু সিকদার (৬৭) বলেন, এবছর ঘূর্নিঝড় রোমালের তান্ডব যেতে না যেতেই একের পর এক নিম্ন চাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি সহ অতিরিক্ত বৃষ্টিতে আমন বীজ তলা পঁচে গেছে। নতুন করে বীজ তলা তৈরী করে আবার ধানের চারা করতে হয়েছে। উপজেলার ধূলাসার ইউনিয়নের নতুনপাড়া এলাকার কৃষক ইদ্রিস গাজী (৫৫) বলেন, এবছর একর প্রতি জমি চাষাবাদে খরচ পড়েছে ১৫ হাজার টাকা। এখন জমির আগাছা নিধন সহ সার, কীন নাশক স্প্রে করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে সার, কীটনাশক বিক্রী করছেন ডিলাররা। চাপলি বাজারের খুচরা ডিলারের দোকান থেকে প্রতি বস্তা টিএসপি সার কিনতে হয়েছে ১৮০০ টাকা, ইউরিয়া ১৪০০ টাকা এবং ড্যাপ সার ১২০০ টাকা। এছাড়া কীটনাশকও কিনতে হয়েছে বেশী দামে। কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা আ. রহমান বলেন, কলাপাড়ায় এ বছর উফশী জাতের উচ্চ ফলনশীল আমন ধান বিআর-১১, বিআর-২২, বিআর-২৩, স্বর্নমুশুরী, ব্রী ধান-৪৯, ব্রী ধান-৫১, ব্রী ধান ৫২ চাষ হয়েছে শতকরা ৭০-৭৫ ভাগ। এছাড়া স্থানীয় জাতের সাক্ষরখানা, রাজাশাইল, কাজল শাইল, বিংগা মনি, সাদা মোটা, মাথা মোটা ও কুটি অগ্রানি জাতের আমন ধানের চাষ করেছেন কৃষক। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরাফাত হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষককে সার্বক্ষনিক সেবা দিচ্ছে। আমি নিজেও প্রতিদিন এক একটি গ্রামে গিয়ে কৃষি কাজ পরিদর্শন সহ কৃষকের সাথে কথা বলি। কৃষকের যেকোন সমস্যা দ্রুত সমাধানের উদ্দোগ নেই।
আরাফাত হোসেন আরও বলেন, সার ডিলারদের অফিস থেকে তদারকি করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী মূল্যে সার বিক্রীর সুযোগ নেই। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাখ//পিব