শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০৭:১১ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
পানির অভাবে সেচ সঙ্কটে ধুকছে বাংলাদেশ সিশেলসকে ১-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ রমজানে পণ্যের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ নেই : তথ্যমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নতুন পরিকল্পিত খেলায় নেমেছে : মির্জা ফখরুল ‘পরাশক্তিরা পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ায় গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি’ প্রতিদিন মার্কিন ঘাঁটির উপর দিয়ে উড়ছে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ‘স্যার’ সম্বোধন ঔপনিবেশিক, এটা বদলাতে হবে–আ স ম রব   পাঁচ দশকেও গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়া হতাশাব্যাঞ্জক : রাবি উপাচার্য  চিতলমারীতে ৬ টি মামলায় ১২ হাজার টাকা অর্থদন্ড মীরসরাইয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ১১টি দোকানকে জরিমানা ৯৩টি দলের বেশিরভাগেরই কাগজপত্র ঠিক নেই: ইসি কাপ্তাইয়ে স্বাধীনতা দিবস শুটিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত  আফগানিস্তানকে ৫১ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশের যুবারা চেয়ারম্যান করছেন রাজমিস্ত্রীর কাজ  শ্রীলঙ্কাকে ৭৬ রানে গুটিয়ে নিউজিল্যান্ডের বড় জয়

কটিয়াদীতে পাঁচশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাঁই মেলা শুরু

কটিয়াদীতে পাঁচশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাঁই মেলা শুরু

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ ) প্রতিনিধি :

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাই নামক স্থানে বার আউলিয়ার অন্যতম হযরত শাহ সামসুদ্দিন সুলতান বুখারী (র.) ওরস শরীফকে ঘিরে শুরু হয়েছে পাঁচশ; বছরের ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাঁই মেলা। শাহ শামসুদ্দিন বুখারির (র.) মাজারে ওরস শরীফকে ঘিরে প্রতি বছরের মতো এবারও এ মেলার আয়োজন হয়।

জনশ্রুতি রয়েছে, ১২২৫ খ্রিঃ ১২ আউলিয়ার সঙ্গে হযরত শাহ শামসুদ্দীন আউলিয়া সুলতানুল বোখারীর (রাঃ) সহচর শাহ নাসির, শাহ কবীর ও শাহ কলন্দর কে নিয়ে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাঁই গ্রামে আস্তানা স্থাপন করেন। এখানে প্রতিবছর বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ সোমবার ফকিরি মেলার মাধ্যমে সোমবার শুরু হয়ে চলবে প্রায় (৭-১২) দিন। মেলায় অংশ নেন বিভিন্ন অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ। যার অন্যতম আকর্ষণ মাছের হাট। মেলার বড় বড় মাছ শত বছরের ঐতিহ্য আজও বহবান। এ ওরসে ধর্ম বর্ণের কোন ভেদাভেদ নেই। সোমবার সন্ধ্যায় ওরসে মোমবাতি, আগরবাতি, নগদ অর্থ বা মানতের দক্ষিণা দিয়ে সাধ্যমত একটি মাছ কিনে তবেই বাড়ি ফিরবে ভক্তরা। ইতোমধ্যে দৃষ্টি আকর্ষণ করা বড় বড় মাছ নিয়ে মেলায় পসরা বসিয়েছে বিক্রেতারা। বিশাল এলাকাজুড়ে বসেছে মাছের পসরা। মাছের কদর ধনী গরিব সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি।

সরেজমিনে মেলায় দেখা যায়, বড় বড় মাছের মধ্যে বোয়াল, চিতল, আইড়, রুই, কাতল, সিলবার কার্পস, পাঙ্গাস, মাসুল, বাগাইরসহ নানা ধরণের মাছের চার শতাধিক দোকান বসেছে। ৪০-৫০ হাজার টাকা দামের ২৫-৩০ কেজি ওজনের মাছ সারা বছর চোখে না পড়লেও ওরসের এ মেলাতে দেখা পাওয়া যায়। আর এসব বড় বড় মাছ দেখতে উৎসুক জনতার ভীড় লেগে যায়। কে কত বড় মাছ কত টাকা দিয়ে নিলো সে বিষয়টিও আলোচনায় মুখরিত থাকে দীর্ঘদিন। মাছ বিক্রেতারা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা সুনামগঞ্জ হাওর ও নদী থেকে মেলায় ১০ দিন আগে থেকে এসব মাছ সংগ্রহ করে মেলাতে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধনাঢ্য ব্যক্তিসহ সর্বস্তরের লোকজন এই মেলা থেকে মাছ কিনে নিয়ে যায়।

এলাকায় প্রচলিত রয়েছে, হযরত শাহ সামসুদ্দিন সুলতান বুখারী (র.) ওরস উপলক্ষে মেলার মাছ খেলে সকল প্রকার দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি দূর হয়। মেলাকে কেন্দ্র করে মেলা সংলগ্ন প্রতি বাড়িতেই নতুন জামাই ও আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াতের রীতি রয়েছে।

মাছ ছাড়াও ১২দিন জুড়ে বেচাকেনা হয় কাঠের আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী। সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয় সাত দিনে।

জানা গেছে, কটিয়াদীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন মেলায় আসছে। মেলা ও ওরস ঘিরে এমন বিচিত্র মেলা ও উৎসব সাধারণত দেখা যায় না। তবে মেলায় মাছের হাটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বড় বড় মাছ ওঠে। এসব মাছ বিক্রি হয় চড়া দামে।

স্থানীয়রা বলেন, এ এলাকায় প্রচলিত একটি বিশ্বাস থেকে অনেকেই মেলায় গিয়ে বোয়াল মাছ কেনার ইচ্ছা পোষণ করেন। তবে শুধু বোয়াল নয়, সব ধরনের বড় মাছই মেলাতে পাওয়া যায়। আর এসব মাছের মূল ক্রেতা হয়ে ওঠেন এ এলাকার মেয়ের জামাইরা। শ্বশুরবাড়ি খুশি রাখতেই নাকি বড় মাছ কেনেন তারা। আর এটা এখন হয়ে উঠেছে এলাকার রীতি।

গতকাল সরজমিন দেখা যায়, কুড়িখাঁই গ্রামের এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন দোকানপাট বসেছে। বিশেষ করে কাঠের আসবাবপত্র, শিশুদের খেলনা, দৈনন্দিন পণ্যসামগ্রী, মেয়েদের সাজগোজের জিনিসপত্র। রয়েছে নানান স্বাদের খাবারের দোকান। মুড়ি, মিষ্টি, খৈ, জিলাপি, মোয়া। কী নেই সেখানে! এসবই দরদাম করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। মেলাতে নাগরদোলা, পুতুল নাচ ও সার্কাস, মোটরসাইকেল রেসসহ রয়েছে বিভিন্ন বিনোদন এবং কাঠ, বাঁশের, লোহার আসবাবপত্র সহ রকমারী দোকানপাট সহ আরো নানা আয়োজন। এ সব দেখে শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও আনন্দ পাচ্ছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ মেলা।

মেলা কমিটির সম্পাদক মইনুজ্জামান অপু জানান, মাজার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। মেলার দোকান বরাদ্দ থেকে যে আয় হয় তা ব্যয় করা হয় মাজার ও স্থানীয় মসজিদের উন্নয়ন কাজে।

কটিয়াদী মডেল থানার ওসি শাহাদত হোসেন জানান, মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

কুড়িখাঁই মেলা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার খানজাদা শাহরিয়ার বিন মান্নান জানান, প্রায় ৫০০ বছর ধরে কুড়িখাঁই মেলাটি হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলা এখন সর্বজনীন উৎসব ও ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে।

বা/খ : এসআর।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *