Deprecated: Optional parameter $avatar declared before required parameter $id_or_email is implicitly treated as a required parameter in /home/banglakhaborbd/public_html/wp-content/themes/Newspaper pro/lib/metabox/user-function.php on line 55
 এখনো অজানা শিক্ষিকার মৃত্যু রহস্য, জামিনে মুক্ত মামুন - বাংলা খবর
ঢাকা ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

 এখনো অজানা শিক্ষিকার মৃত্যু রহস্য, জামিনে মুক্ত মামুন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:২৭:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২২
  • / ৫২৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

নাটোরের সেই আলোচিত কলেজ শিক্ষিকা খায়রুন নাহারের (৪০) মৃত্যুর ঘটনায় আটক তার স্বামী মামুন (২২) এক মাস ৮ দিন আগেই জামিন পেয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়টি এত দিন গোপন ছিল।

জানা গেছে, গত ১৫ আগস্ট মামুনের জামিন আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর করেন বিচারক। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদন করলে শুনানি শেষে অস্থায়ী জামিনের আদেশ দেন সদর আমলি আদালতের বিচারক নাটোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলজার রহমান। ২৩ সেপ্টেম্বর শুনানির দিনে জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। মামলা শুনানির জন্য আগামী ২৫ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়েছে।

আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম সারোয়ার স্বপন জানান, মামুন হোসেনকে গ্রেপ্তারের ২৫ দিন পর বৃহস্পতিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) নাটোর আমলি আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তার জামিনের আবেদন করলে বিচারক অস্থায়ী জামিনের আদেশ দেন।

এর আগে গত ১৪ আগস্ট সকালে নাটোর শহরের বলারিপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে খুবজিপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক খায়রুন নাহারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর খায়রুনের চাচাতো ভাই সাবের উদ্দীন একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। এই মামলায় মামুনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।

শিক্ষিকার বড় ছেলে সালমান নাফি বলেন, ‌আমার মাকে আত্মহত্যা করার জন্য চাপ দিয়েছে ওই ছেলে। যার কারণে আমার মা বাধ্য হয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি চাই আমার মায়ের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত হোক। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীকে আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করছি।

মামলার বাদী সাবের উদ্দীন বলেন, খায়রুন তার কোন বন্ধুকে টাকা দিয়েছিল, সেই বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে সোনালী ব্যাংকের গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় শাখার ম্যানেজার আমাকে বলেছিলেন, মৃত্যুর প্রায় তিন মাস আগে ওই ব্যাংক থেকে ১৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন খায়রুন। ওই সময় মামুন তার সঙ্গে ছিলেন। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক থেকে তিন লাখ ছাড়াও একটি এনজিও থেকে তিন লাখ টাকা তুলে মামুনকে দিয়েছিলেন। ওই টাকা দিয়ে তার বাড়িতে টিনশেড দুটি রুম করেন মামুন এবং আসবাবপত্র, ফ্রিজসহ কিছু জিনিসপত্র কেনেন। মৃত্যুর ১৮ দিন আগে তাকে মোটরসাইকেল কিনে দেন খায়রুন। এছাড়া ধান কিনে ব্যবসা করবেন বলে খায়রুনের কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা নিয়েছিলেন মামুন।

তিনি আরও বলেন, মৃত্যুর রাতে ছেলে বৃন্তকে খায়রুন বলেছিলেন, তিনি আটটি ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন। একটি খেলেই মানুষ বিভোরে ঘুমায়। তাহলে আটটি খাওয়ার পর একজন মানুষ কীভাবে গলায় ফাঁস নিতে পারেন?

তিনি বলেন, মামুন ওই রাতে (১৩ আগস্ট) কখন বাইরে গিয়ে কখন ফিরেছেন, তা এখন প্রমাণিত। খায়রুনকে সেই হত্যা করেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

শিক্ষিকার চাচাতো ভাই নাঈম হাসান বলেন, বিয়ের পর ওই ছেলে খাইরুন নাহারকে টাকা-পয়সার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিল। টাকার জন্য অনেক সময় তাকে মারধর করতো। শুনেছি ওই ছেলে নাকি জামিনে বের হয়েছে। আইনের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। এই মৃত্যুর একটা সুষ্ঠু তদন্ত আমরা চাই।

নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সাবেক আরএমও সামিউল ইসলাম শান্ত বলেন, শিক্ষিকা খায়রুন নাহারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মরদেহের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শ্বাসরোধ হওয়ার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তারপরও ভিসেরা রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত জানা যাবে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এ জে মিন্টু জানান, এ ঘটনায় নিহতের চাচাতো ভাই সাবের উদ্দিন বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। এতে শিক্ষিকার মৃত্যুর সঙ্গে স্বামী মামুনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে এমন ধারণা থেকে তাকে ওই মামলায় ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ঢাকার রিপোর্ট আসার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০২১ এর ১২ ডিসেম্বর কলেজ ছাত্র মামুন ও শিক্ষিকা খায়রুন নাহারের বিয়ে হয়। এই বিষয়টি ৩১ জুলাই জানাজানি হলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর ১৪ দিন পর ১৪ই আগস্ট সকালে নাটোর শহরের বলারিপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে খায়রুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুনকে আটক করা হয়। পরে খায়রুনের চাচাতো ভাইয়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

 এখনো অজানা শিক্ষিকার মৃত্যু রহস্য, জামিনে মুক্ত মামুন

আপডেট সময় : ০৭:২৭:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :

নাটোরের সেই আলোচিত কলেজ শিক্ষিকা খায়রুন নাহারের (৪০) মৃত্যুর ঘটনায় আটক তার স্বামী মামুন (২২) এক মাস ৮ দিন আগেই জামিন পেয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়টি এত দিন গোপন ছিল।

জানা গেছে, গত ১৫ আগস্ট মামুনের জামিন আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর করেন বিচারক। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদন করলে শুনানি শেষে অস্থায়ী জামিনের আদেশ দেন সদর আমলি আদালতের বিচারক নাটোরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলজার রহমান। ২৩ সেপ্টেম্বর শুনানির দিনে জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। মামলা শুনানির জন্য আগামী ২৫ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়েছে।

আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম সারোয়ার স্বপন জানান, মামুন হোসেনকে গ্রেপ্তারের ২৫ দিন পর বৃহস্পতিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) নাটোর আমলি আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তার জামিনের আবেদন করলে বিচারক অস্থায়ী জামিনের আদেশ দেন।

এর আগে গত ১৪ আগস্ট সকালে নাটোর শহরের বলারিপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে খুবজিপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক খায়রুন নাহারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর খায়রুনের চাচাতো ভাই সাবের উদ্দীন একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। এই মামলায় মামুনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।

শিক্ষিকার বড় ছেলে সালমান নাফি বলেন, ‌আমার মাকে আত্মহত্যা করার জন্য চাপ দিয়েছে ওই ছেলে। যার কারণে আমার মা বাধ্য হয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি চাই আমার মায়ের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত হোক। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীকে আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করছি।

মামলার বাদী সাবের উদ্দীন বলেন, খায়রুন তার কোন বন্ধুকে টাকা দিয়েছিল, সেই বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে সোনালী ব্যাংকের গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় শাখার ম্যানেজার আমাকে বলেছিলেন, মৃত্যুর প্রায় তিন মাস আগে ওই ব্যাংক থেকে ১৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন খায়রুন। ওই সময় মামুন তার সঙ্গে ছিলেন। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক থেকে তিন লাখ ছাড়াও একটি এনজিও থেকে তিন লাখ টাকা তুলে মামুনকে দিয়েছিলেন। ওই টাকা দিয়ে তার বাড়িতে টিনশেড দুটি রুম করেন মামুন এবং আসবাবপত্র, ফ্রিজসহ কিছু জিনিসপত্র কেনেন। মৃত্যুর ১৮ দিন আগে তাকে মোটরসাইকেল কিনে দেন খায়রুন। এছাড়া ধান কিনে ব্যবসা করবেন বলে খায়রুনের কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা নিয়েছিলেন মামুন।

তিনি আরও বলেন, মৃত্যুর রাতে ছেলে বৃন্তকে খায়রুন বলেছিলেন, তিনি আটটি ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন। একটি খেলেই মানুষ বিভোরে ঘুমায়। তাহলে আটটি খাওয়ার পর একজন মানুষ কীভাবে গলায় ফাঁস নিতে পারেন?

তিনি বলেন, মামুন ওই রাতে (১৩ আগস্ট) কখন বাইরে গিয়ে কখন ফিরেছেন, তা এখন প্রমাণিত। খায়রুনকে সেই হত্যা করেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

শিক্ষিকার চাচাতো ভাই নাঈম হাসান বলেন, বিয়ের পর ওই ছেলে খাইরুন নাহারকে টাকা-পয়সার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিল। টাকার জন্য অনেক সময় তাকে মারধর করতো। শুনেছি ওই ছেলে নাকি জামিনে বের হয়েছে। আইনের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। এই মৃত্যুর একটা সুষ্ঠু তদন্ত আমরা চাই।

নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সাবেক আরএমও সামিউল ইসলাম শান্ত বলেন, শিক্ষিকা খায়রুন নাহারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মরদেহের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শ্বাসরোধ হওয়ার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তারপরও ভিসেরা রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত জানা যাবে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এ জে মিন্টু জানান, এ ঘটনায় নিহতের চাচাতো ভাই সাবের উদ্দিন বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। এতে শিক্ষিকার মৃত্যুর সঙ্গে স্বামী মামুনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে এমন ধারণা থেকে তাকে ওই মামলায় ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ঢাকার রিপোর্ট আসার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০২১ এর ১২ ডিসেম্বর কলেজ ছাত্র মামুন ও শিক্ষিকা খায়রুন নাহারের বিয়ে হয়। এই বিষয়টি ৩১ জুলাই জানাজানি হলে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর ১৪ দিন পর ১৪ই আগস্ট সকালে নাটোর শহরের বলারিপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে খায়রুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুনকে আটক করা হয়। পরে খায়রুনের চাচাতো ভাইয়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।