ঢাকা ০৫:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

উত্তরের উদ্বৃত্ত রোপা আমনের চারা বীজ চলে যাচ্ছে দক্ষিণে

আশরাফুল ইসলাম রনি, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১২:০১:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৪৩৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

খাদ্য শস্য ভান্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মাধাইনগর এলাকার কৃষক জয়নুল আবেদিন। তিনি এক বিঘা জমিতে রোপা আমনের বীজতলা তৈরি করে ছিলেন। সে বীজতলার চারা বীজ দিয়ে তার ১৮ বিঘা জমিতে চারা ধান লাগান। এরপর ও উদ্বৃত্ত চারাবীজ প্রায় ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে লাভবান হন।

এ ভাবে চলনবিলের উত্তরের তাড়াশসহ আশে-পাশের এলাকার রোপা আমনের উদ্বৃত্ত চারা বীজ ভাল দামে হাত বদল হয়ে চলে যাচ্ছে বিলপাড়ের দক্ষিণ এলাকায়। এতে এক দিকে চারা বীজ বিক্রি করে যেমন উত্তর এলাকার কৃষক কিছু বাড়তি আয় করছেন। তেমনি বীজ সংকটে থাকা চলনবিলের অপর অংশের কৃষক বীজ পেয়ে পতিত জমিতে রোপা আমনের আবাদ নেমে পড়েছেন। ফলে চলনবিল অঞ্চলে এ বছর রোপা আমনের আবাদি জমির পরিমাণও বাড়ছে। তাই এ বছর অতিরিক্ত খাদ্য শস্য ধান উৎপাদনের আশা করছেন সংশ্লিট উপজেলা গুলোর কৃষি বিভাগ।

মুলতঃ নিকট অতিতে চলনবিল এলাকার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন অংশে বর্ষা মৌসুমে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার মাস পানি থাকতো। কিন্তু সাম্প্রতিক বছর গুলোতে আবহাওয়া জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে বিলে পানি থাকার আয়ুকাল কমে এসেছে। যেমন, এ বছর শেষ আষাঢ়ে চলনবিলের বিভিন্ন অংশে মাঝারি মানের বন্যা হয়। যা দেড় মাসের মত ছিল। আর ভাদ্র মাসের শুরুর প্রায় এক সপ্তাহ পূবেই চলনবিলের উল্লাপাড়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, গুরুদাসপুর এলাকার বিভিন্ন অংশ থেকে পানি একেবারে নেমে গেছে। যে কারণে ওই সকল এলাকার শতশত একর পতিত জমি রোপা আমন ধান লাগানোর উপযোগি হয়ে উঠেছে। আর তা এলাকার কৃষকেরা হাত ছাড়ানা করে রোপা আমনের আবাদে মনোনিবেশ করছেন বলে জানান, চলনবিলের ছাইকোলা এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি আরো জানান, অথচ রোপা আমন ধান লাগানোর উপযোগি ওই সকল জমির কৃষকদের অনেকেরই চারা বীজ নাই। তাই তারা উত্তরের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, শেরপুর এলাকা থেকে এ এলাকার আবাদের পর উব্ধৃত্ত থাকা চারা বীজ বেশ চড়া দামে সংগ্রহে নেমেছেন।

তাড়াশ কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৯২ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের রোপা আমন ধান চাষের মৌসুমের চেয়ে এ মৌসুমে প্রায় ৬৫০ হেক্টর বেশি। পাশাপাশি এ জন্য এ এলাকায় কৃষক প্রায় ৮৭০ হেক্টর জমিতে ব্রি ৭৫, ৯০, ৮৭, বিনা ধান-১৭ ও ২২ এবং স্বর্ণা, গুটি স্বর্ণা, কাটারি ভোগ, রনজিৎ জাতের ধানের চারাবীজের বীজতলা তৈরি করেছিলেন। বর্তমানে এ উপজেলায় প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ জমিতে রোপা আমনের ধান লাগানো শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনও অনেক কৃষকের জমিতে উব্ধৃত পড়ে আছে রোপা ধানের চারাবীজ। যা এখন তারা বিক্রি করছেন। যার ক্রেতার বেশির ভাগই চলনবিলের উল্লাপাড়া, চাটমোহর, ভঙ্গুড়া, গুরুদাসপুর এলাকার বিভিন গ্রামের কৃষক।

তারা ১০০ টির আঁটি প্রকার ভেদে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় কিনে অটোভ্যান, নছিমন, ভুডভুডি বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান, কাছিকাটা এলাকার কৃষক রোস্তম আলী সরদার। আর এ ভাবে প্রতিদিন শুধু তাড়াশ এলাকা থেকেই ৩৫ থেকে ৪০ গাড়ি রোপা আমনের চারা বীজ চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। অপর দিকে তাড়াশের বস্তুল গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি নিজের আবাদের পর বেচে যাওয়া রোপা আমনের চারা প্রায় ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে তিনি যেমন লাভবান হয়েছেন। তেমনি বীজ সংকটে থাকা অন্য এলাকার কৃষক ও সংকট মোকাবেলা করতে পারছেন।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, রাসানিক সার, কীটনাশক ও চারা বীজের সংকট থাকা ও পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় চলনবিল এলাকায় রোপা আমন ধানের আবাদ বাড়ছে। আর চলনবিলের অন্য এলাকায় চারা বীজের সংকটে থাকা অনেক কৃষক তাড়াশ এলাকা থেকে তা সংগ্রহ করছেন। এতে উভয় এলাকার কৃষক লাভবান হচ্ছেন।

 

বাখ//আর

নিউজটি শেয়ার করুন

উত্তরের উদ্বৃত্ত রোপা আমনের চারা বীজ চলে যাচ্ছে দক্ষিণে

আপডেট সময় : ১২:০১:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

খাদ্য শস্য ভান্ডার খ্যাত সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মাধাইনগর এলাকার কৃষক জয়নুল আবেদিন। তিনি এক বিঘা জমিতে রোপা আমনের বীজতলা তৈরি করে ছিলেন। সে বীজতলার চারা বীজ দিয়ে তার ১৮ বিঘা জমিতে চারা ধান লাগান। এরপর ও উদ্বৃত্ত চারাবীজ প্রায় ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে লাভবান হন।

এ ভাবে চলনবিলের উত্তরের তাড়াশসহ আশে-পাশের এলাকার রোপা আমনের উদ্বৃত্ত চারা বীজ ভাল দামে হাত বদল হয়ে চলে যাচ্ছে বিলপাড়ের দক্ষিণ এলাকায়। এতে এক দিকে চারা বীজ বিক্রি করে যেমন উত্তর এলাকার কৃষক কিছু বাড়তি আয় করছেন। তেমনি বীজ সংকটে থাকা চলনবিলের অপর অংশের কৃষক বীজ পেয়ে পতিত জমিতে রোপা আমনের আবাদ নেমে পড়েছেন। ফলে চলনবিল অঞ্চলে এ বছর রোপা আমনের আবাদি জমির পরিমাণও বাড়ছে। তাই এ বছর অতিরিক্ত খাদ্য শস্য ধান উৎপাদনের আশা করছেন সংশ্লিট উপজেলা গুলোর কৃষি বিভাগ।

মুলতঃ নিকট অতিতে চলনবিল এলাকার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন অংশে বর্ষা মৌসুমে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার মাস পানি থাকতো। কিন্তু সাম্প্রতিক বছর গুলোতে আবহাওয়া জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে বিলে পানি থাকার আয়ুকাল কমে এসেছে। যেমন, এ বছর শেষ আষাঢ়ে চলনবিলের বিভিন্ন অংশে মাঝারি মানের বন্যা হয়। যা দেড় মাসের মত ছিল। আর ভাদ্র মাসের শুরুর প্রায় এক সপ্তাহ পূবেই চলনবিলের উল্লাপাড়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, গুরুদাসপুর এলাকার বিভিন্ন অংশ থেকে পানি একেবারে নেমে গেছে। যে কারণে ওই সকল এলাকার শতশত একর পতিত জমি রোপা আমন ধান লাগানোর উপযোগি হয়ে উঠেছে। আর তা এলাকার কৃষকেরা হাত ছাড়ানা করে রোপা আমনের আবাদে মনোনিবেশ করছেন বলে জানান, চলনবিলের ছাইকোলা এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি আরো জানান, অথচ রোপা আমন ধান লাগানোর উপযোগি ওই সকল জমির কৃষকদের অনেকেরই চারা বীজ নাই। তাই তারা উত্তরের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, শেরপুর এলাকা থেকে এ এলাকার আবাদের পর উব্ধৃত্ত থাকা চারা বীজ বেশ চড়া দামে সংগ্রহে নেমেছেন।

তাড়াশ কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৯২ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের রোপা আমন ধান চাষের মৌসুমের চেয়ে এ মৌসুমে প্রায় ৬৫০ হেক্টর বেশি। পাশাপাশি এ জন্য এ এলাকায় কৃষক প্রায় ৮৭০ হেক্টর জমিতে ব্রি ৭৫, ৯০, ৮৭, বিনা ধান-১৭ ও ২২ এবং স্বর্ণা, গুটি স্বর্ণা, কাটারি ভোগ, রনজিৎ জাতের ধানের চারাবীজের বীজতলা তৈরি করেছিলেন। বর্তমানে এ উপজেলায় প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ জমিতে রোপা আমনের ধান লাগানো শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনও অনেক কৃষকের জমিতে উব্ধৃত পড়ে আছে রোপা ধানের চারাবীজ। যা এখন তারা বিক্রি করছেন। যার ক্রেতার বেশির ভাগই চলনবিলের উল্লাপাড়া, চাটমোহর, ভঙ্গুড়া, গুরুদাসপুর এলাকার বিভিন গ্রামের কৃষক।

তারা ১০০ টির আঁটি প্রকার ভেদে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় কিনে অটোভ্যান, নছিমন, ভুডভুডি বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান, কাছিকাটা এলাকার কৃষক রোস্তম আলী সরদার। আর এ ভাবে প্রতিদিন শুধু তাড়াশ এলাকা থেকেই ৩৫ থেকে ৪০ গাড়ি রোপা আমনের চারা বীজ চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। অপর দিকে তাড়াশের বস্তুল গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি নিজের আবাদের পর বেচে যাওয়া রোপা আমনের চারা প্রায় ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে তিনি যেমন লাভবান হয়েছেন। তেমনি বীজ সংকটে থাকা অন্য এলাকার কৃষক ও সংকট মোকাবেলা করতে পারছেন।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, রাসানিক সার, কীটনাশক ও চারা বীজের সংকট থাকা ও পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় চলনবিল এলাকায় রোপা আমন ধানের আবাদ বাড়ছে। আর চলনবিলের অন্য এলাকায় চারা বীজের সংকটে থাকা অনেক কৃষক তাড়াশ এলাকা থেকে তা সংগ্রহ করছেন। এতে উভয় এলাকার কৃষক লাভবান হচ্ছেন।

 

বাখ//আর