ঢাকা ১২:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে পালানো রুশ সেনারা কোথায় যাচ্ছেন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:২৮:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অগাস্ট ২০২৩
  • / ৫৩২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত বছরেও মস্কোতে মা ভাইবোনদের সঙ্গে বাস করতেন অ্যালেক্সেই (ছদ্মনাম)। চাকরি করতেন একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ বাহিনী আক্রমণ করার পর তার জীবনটাই এলোমেলো হয়ে গেছে। এখন তিনি বাস করেন থাইল্যান্ডের ফুকেটে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অ্যালেক্সেই বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে আমার সামনে দুটো পথ খোলা ছিল। এক, হয় ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে যাও অথবা রাশিয়ায় থেকে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করো। দুটোই ছিল আমার পক্ষে অসম্ভব। কারণ ইউক্রেনীয়রা আমার ভাই, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারি না। দ্বিতীয়ত, রাশিয়ায় থেকে পুতিনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা অর্থহীন। অ্যালেক্সেই তাই প্রাণ বাঁচাতে থাইল্যান্ডের ফুকেটে পালিয়ে গিয়েছেন।

দ্য গার্ডিয়ান বলছে, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া পুতিনের যুদ্ধ থেকে বাঁচতে অ্যালেক্সেইয়ের মতো হাজার হাজার রুশ নাগরিক নিজ দেশ থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ কাজাখস্তান, জর্জিয়া কিংবা তুরস্কে চলে গেছেন। সবচেয়ে বেশি গেছেন থাইল্যান্ডে।

থাইল্যান্ডের ফুকেট রিয়েল এস্টেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ফাত্তানান ফিসুতভিমল জানান, গত বছর ফুকেটে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক ক্রেতা ছিল রুশ নাগরিকেরা। চলতি বছরে সেই হার আরও বেড়েছে। এ বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ফুকেটে রুশদের বাড়ি কেনার হার বেড়েছে ৬৮ শতাংশ।

ফুকেট হচ্ছে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। রুশদের প্রথম পছন্দের জায়গা ফুকেট। আগে থেকেই হাজার হাজার রুশ পর্যটক ফুকেটে বেড়াতে আসেন। অনেক রুশ স্থায়ীভাবে দোকানপাট, ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে শিকড় গেড়ে বসেছেন ফুকেটে।

ফুকেট সমুদ্র সৈকতের কাছে দীর্ঘদিন ধরে আম, আনারসসহ নানা ধরনের ফল বিক্রি করেন ৪৩ বছর বয়সী ওয়ারাপর্ন ট্যাংকাইউ। তিনি বলেন, রুশরাই আমার প্রধান ক্রেতা। বছরজুড়ে শত শত রুশ নাগরিক এখানে ভ্রমণে আসেন।

অ্যালেক্সেই বলেন, গত বছর ফুকেটে আসার পর দেখি, এখানে শত শত রুশ থাকে। আমার এখানে একা বা আগন্তুক বোধ করার সুযোগ নেই।

অ্যালেক্সেই এখন ফুকেটে বসে রুশ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তবে কতদিন এভাবে কাজ করতে পারবেন জানেন না। তিনি আশঙ্কা করছেন, যেকোনো সময় তাঁকে মস্কোর অফিসে ফিরিয়ে নেওয়া হতে পারে।

গত মার্চে থাই মন্ত্রিসভা রাশিয়ার সঙ্গে একটি খসড়া প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবে এটি কখন কার্যকর হবে তা স্পষ্ট নয়। আলেক্সেই আশা করেন, চুক্তিটি কার্যকর হবে না বা যদি হয় তবে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হবে না।

অ্যালেক্সেই বলেন, ‘আমি এক ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছি। দেশে (রাশিয়ায়) আমার পরিবার রয়েছে। তারা আমার জন্য উদ্বিগ্ন। আমি অন্যান্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি খুঁজছি।’

দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে অ্যালেক্সেই বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। আমি হয়তো আমার দাদা-দাদীকে আর কখনোই দেখতে পাব না। তাদের বয়স হয়ে গিয়েছে এবং অসুস্থ। রাশিয়ায় থেকে যাওয়া আমার ভাইদের জন্যও আমার ভীষণ কষ্ট লাগে। তাদের হয়তো অচিরেই জোর করে ইউক্রেনে পাঠানো হবে যুদ্ধ করতে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে পালানো রুশ সেনারা কোথায় যাচ্ছেন

আপডেট সময় : ০১:২৮:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অগাস্ট ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত বছরেও মস্কোতে মা ভাইবোনদের সঙ্গে বাস করতেন অ্যালেক্সেই (ছদ্মনাম)। চাকরি করতেন একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ বাহিনী আক্রমণ করার পর তার জীবনটাই এলোমেলো হয়ে গেছে। এখন তিনি বাস করেন থাইল্যান্ডের ফুকেটে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অ্যালেক্সেই বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে আমার সামনে দুটো পথ খোলা ছিল। এক, হয় ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে যাও অথবা রাশিয়ায় থেকে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করো। দুটোই ছিল আমার পক্ষে অসম্ভব। কারণ ইউক্রেনীয়রা আমার ভাই, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারি না। দ্বিতীয়ত, রাশিয়ায় থেকে পুতিনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা অর্থহীন। অ্যালেক্সেই তাই প্রাণ বাঁচাতে থাইল্যান্ডের ফুকেটে পালিয়ে গিয়েছেন।

দ্য গার্ডিয়ান বলছে, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া পুতিনের যুদ্ধ থেকে বাঁচতে অ্যালেক্সেইয়ের মতো হাজার হাজার রুশ নাগরিক নিজ দেশ থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ কাজাখস্তান, জর্জিয়া কিংবা তুরস্কে চলে গেছেন। সবচেয়ে বেশি গেছেন থাইল্যান্ডে।

থাইল্যান্ডের ফুকেট রিয়েল এস্টেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ফাত্তানান ফিসুতভিমল জানান, গত বছর ফুকেটে বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক ক্রেতা ছিল রুশ নাগরিকেরা। চলতি বছরে সেই হার আরও বেড়েছে। এ বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ফুকেটে রুশদের বাড়ি কেনার হার বেড়েছে ৬৮ শতাংশ।

ফুকেট হচ্ছে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। রুশদের প্রথম পছন্দের জায়গা ফুকেট। আগে থেকেই হাজার হাজার রুশ পর্যটক ফুকেটে বেড়াতে আসেন। অনেক রুশ স্থায়ীভাবে দোকানপাট, ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে শিকড় গেড়ে বসেছেন ফুকেটে।

ফুকেট সমুদ্র সৈকতের কাছে দীর্ঘদিন ধরে আম, আনারসসহ নানা ধরনের ফল বিক্রি করেন ৪৩ বছর বয়সী ওয়ারাপর্ন ট্যাংকাইউ। তিনি বলেন, রুশরাই আমার প্রধান ক্রেতা। বছরজুড়ে শত শত রুশ নাগরিক এখানে ভ্রমণে আসেন।

অ্যালেক্সেই বলেন, গত বছর ফুকেটে আসার পর দেখি, এখানে শত শত রুশ থাকে। আমার এখানে একা বা আগন্তুক বোধ করার সুযোগ নেই।

অ্যালেক্সেই এখন ফুকেটে বসে রুশ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তবে কতদিন এভাবে কাজ করতে পারবেন জানেন না। তিনি আশঙ্কা করছেন, যেকোনো সময় তাঁকে মস্কোর অফিসে ফিরিয়ে নেওয়া হতে পারে।

গত মার্চে থাই মন্ত্রিসভা রাশিয়ার সঙ্গে একটি খসড়া প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবে এটি কখন কার্যকর হবে তা স্পষ্ট নয়। আলেক্সেই আশা করেন, চুক্তিটি কার্যকর হবে না বা যদি হয় তবে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হবে না।

অ্যালেক্সেই বলেন, ‘আমি এক ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছি। দেশে (রাশিয়ায়) আমার পরিবার রয়েছে। তারা আমার জন্য উদ্বিগ্ন। আমি অন্যান্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি খুঁজছি।’

দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে অ্যালেক্সেই বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। আমি হয়তো আমার দাদা-দাদীকে আর কখনোই দেখতে পাব না। তাদের বয়স হয়ে গিয়েছে এবং অসুস্থ। রাশিয়ায় থেকে যাওয়া আমার ভাইদের জন্যও আমার ভীষণ কষ্ট লাগে। তাদের হয়তো অচিরেই জোর করে ইউক্রেনে পাঠানো হবে যুদ্ধ করতে।’