ঢাকা ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

আল্টিমেটাম দিয়ে কাজে ফিরলেন চিকিৎসকরা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:১৬:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৪৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

খুলনা ব্যুরো অফিস : 

চিকিৎসক নিশাত আবদুল্লাহকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দিয়ে সাত দিনের জন্য কর্মবিরতি স্থগিত করে কাজে ফিরেছেন খুলনার চিকিৎসকরা।

শনিবার (৪ মার্চ) খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) নেতাদের বৈঠকের পর শর্তসাপেক্ষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কথা জানানো হয় চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে।

কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণার পর চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে আগামী ৭ দিনের মধ্যে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নাঈম শেখকে (সাতক্ষীরা সদর) গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা এবং ডা. নিশাত আব্দুল্লাহর নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের শর্ত দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাশিদা সুলতানা, খুলনা বিএমএর সভাপতি ডা. বাহারুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার মেহেদি নেওয়াজসহ চিকিৎসকরা বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের একজন ডাক্তারকে নিয়ে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। সেই ডাক্তারের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে, খারাপ আচরণ করা হয়েছে, সেজন্য তার সহযোদ্ধা-সাথীরা কর্মবিরতি পালন করছে। পুলিশের একজন এএসআই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা বৈঠকে বিএমএ এর দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি। তাদের যে দাবি সেই দাবি বিষয়ে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। আলোচনার ভিত্তিতে প্রশাসনও একমত হয়েছে। সকল সমস্যার সমাধান হবে। বিএমএ’র সন্ধ্যায় মিটিং আছে। এর আগে আমরা তাদের বলেছি কর্মবিরতি ৭ দিনের জন্য স্থগিত রাখতে। আজকে তারা এই বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। তারা এখন থেকে কাজে ফিরবেন।

খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, তারা ৭দিনের জন্য কর্মবিরতি স্থগিত করবে। আমরা অনুরোধ করবো এখন থেকেই তারা কর্মে যোগদান করবে। সন্ধ্যায় সাধারণ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিবে। সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যার যে দায়িত্ব সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।

বিএমএ খুলনার সভাপতি ডাক্তার শেখ বাহারুল আলম বলেন, আমরা আমাদের কর্মসূচি আজকে এই সময় থেকে সাত দিনের জন্য স্থগিত করলাম। তবে সন্ধ্যায় আমরা সাধারণ সভা করে প্রেস ব্রিফ করব।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা পুলিশে কর্মরত এএসআই নাঈমুজ্জামান শেখ ও তার কয়েকজন সঙ্গী খুলনা নগরীর শেখপাড়া এলাকার হক নার্সিং হোমে হামলা চালান বলে অভিযোগ করেন চিকিৎসকরা। ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে তারা অস্ত্রোপচার কক্ষে ঢুকে ডা. নিশাত আবদুল্লাহকে মারধর করেন। ওই ঘটনায় ডা. নিশাত আবদুল্লাহ বাদী হয়ে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। বুধবার (১ মার্চ) একই থানায় এএসআই নাঈমুজ্জামান শেখের স্ত্রী নুসরাত আরা ময়না বাদী হয়ে ডা. নিশাত আবদুল্লাহ এবং হক নার্সিং হোমের মালিক নুরুল হক ফকিরের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন।

মারধরের ঘটনায় বুধবার (১ মার্চ) ভোর ছয়টা থেকে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করে আসছেন চিকিৎসকরা। এর ফলে চার দিন ধরে খুলনার সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা নিতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরাও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না।

চিকিৎসকদের দাবি, দায়ী পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের কর্মস্থলে ফেরাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হয়।

সঙ্কট নিরসনে শনিবার সকালে বিএমএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন খুলনা সিটির মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। বৈঠকে মেয়রের আশ্বাসে শর্তসাপেক্ষে সাত দিনের জন্য কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা।

এর আগে সকালে খুলনার বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মো. শহিদুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, চিকিৎসকদের আজই যেকোনো সময় কর্মবিরতি স্থগিত করবেন। তিনি বলেছিলেন, শনিবার যেকোনো সময় বিএমএ’র সভাপতি শেখ বাহরুল আলম আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেবেন। এর কিছু সময় পরই কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা আসে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আল্টিমেটাম দিয়ে কাজে ফিরলেন চিকিৎসকরা

আপডেট সময় : ০৩:১৬:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ মার্চ ২০২৩

খুলনা ব্যুরো অফিস : 

চিকিৎসক নিশাত আবদুল্লাহকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দিয়ে সাত দিনের জন্য কর্মবিরতি স্থগিত করে কাজে ফিরেছেন খুলনার চিকিৎসকরা।

শনিবার (৪ মার্চ) খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) নেতাদের বৈঠকের পর শর্তসাপেক্ষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কথা জানানো হয় চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে।

কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণার পর চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে আগামী ৭ দিনের মধ্যে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) নাঈম শেখকে (সাতক্ষীরা সদর) গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা এবং ডা. নিশাত আব্দুল্লাহর নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের শর্ত দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাশিদা সুলতানা, খুলনা বিএমএর সভাপতি ডা. বাহারুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার মেহেদি নেওয়াজসহ চিকিৎসকরা বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের একজন ডাক্তারকে নিয়ে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। সেই ডাক্তারের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে, খারাপ আচরণ করা হয়েছে, সেজন্য তার সহযোদ্ধা-সাথীরা কর্মবিরতি পালন করছে। পুলিশের একজন এএসআই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা বৈঠকে বিএমএ এর দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি। তাদের যে দাবি সেই দাবি বিষয়ে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। আলোচনার ভিত্তিতে প্রশাসনও একমত হয়েছে। সকল সমস্যার সমাধান হবে। বিএমএ’র সন্ধ্যায় মিটিং আছে। এর আগে আমরা তাদের বলেছি কর্মবিরতি ৭ দিনের জন্য স্থগিত রাখতে। আজকে তারা এই বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। তারা এখন থেকে কাজে ফিরবেন।

খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, তারা ৭দিনের জন্য কর্মবিরতি স্থগিত করবে। আমরা অনুরোধ করবো এখন থেকেই তারা কর্মে যোগদান করবে। সন্ধ্যায় সাধারণ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিবে। সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যার যে দায়িত্ব সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।

বিএমএ খুলনার সভাপতি ডাক্তার শেখ বাহারুল আলম বলেন, আমরা আমাদের কর্মসূচি আজকে এই সময় থেকে সাত দিনের জন্য স্থগিত করলাম। তবে সন্ধ্যায় আমরা সাধারণ সভা করে প্রেস ব্রিফ করব।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা পুলিশে কর্মরত এএসআই নাঈমুজ্জামান শেখ ও তার কয়েকজন সঙ্গী খুলনা নগরীর শেখপাড়া এলাকার হক নার্সিং হোমে হামলা চালান বলে অভিযোগ করেন চিকিৎসকরা। ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে তারা অস্ত্রোপচার কক্ষে ঢুকে ডা. নিশাত আবদুল্লাহকে মারধর করেন। ওই ঘটনায় ডা. নিশাত আবদুল্লাহ বাদী হয়ে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। বুধবার (১ মার্চ) একই থানায় এএসআই নাঈমুজ্জামান শেখের স্ত্রী নুসরাত আরা ময়না বাদী হয়ে ডা. নিশাত আবদুল্লাহ এবং হক নার্সিং হোমের মালিক নুরুল হক ফকিরের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন।

মারধরের ঘটনায় বুধবার (১ মার্চ) ভোর ছয়টা থেকে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করে আসছেন চিকিৎসকরা। এর ফলে চার দিন ধরে খুলনার সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা নিতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরাও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না।

চিকিৎসকদের দাবি, দায়ী পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের কর্মস্থলে ফেরাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হয়।

সঙ্কট নিরসনে শনিবার সকালে বিএমএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন খুলনা সিটির মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। বৈঠকে মেয়রের আশ্বাসে শর্তসাপেক্ষে সাত দিনের জন্য কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা।

এর আগে সকালে খুলনার বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মো. শহিদুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, চিকিৎসকদের আজই যেকোনো সময় কর্মবিরতি স্থগিত করবেন। তিনি বলেছিলেন, শনিবার যেকোনো সময় বিএমএ’র সভাপতি শেখ বাহরুল আলম আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেবেন। এর কিছু সময় পরই কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা আসে।