ঢাকা ১০:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

আদালতে মাথা ন্যাড়া করে মমতাকে হুঁশিয়ারি আইনজীবী কৌস্তভের

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:৫৯:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ মার্চ ২০২৩
  • / ৪৬২ বার পড়া হয়েছে
বাংলা খবর বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন কংগ্রেস নেতা আইনজীবী কৌস্তুভ বাগচি। বারাকপুরের বাসা থেকে শুক্রবার (৩ মার্চ) সকাল ৮টায় কৌস্তুভকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার গভীর রাতে কৌস্তুভের বারাকপুরের বাড়িতে যায় তারা। ৫ ঘণ্টা পর সকাল ৮টায় গ্রেফতার করা হয় তাকে।

কৌস্তভের মন্তব্যের ভিত্তিতে বড়তলা থানায় লিখিত অভিযোগের কারণেই এই গ্রেফতার বলে জানায় বাহিনীটি। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩, ৫০৪, ৫০৫, ৫০৬, ৫০৯, ৩৫৪ এ এবং ১২০বি ধারায় আইনজীবী ও কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচীকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

এ দিন এক হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে কৌস্তুভকে জামিন দেয় ব্যাঙ্কশাল আদালত। এরপরেই আদালতের বাইরে এসে মাথা ন্যাড়া করেন তিনি। এ সময় কৌস্তুভের পাশে ছিলেন কংগ্রেস এবং বাম আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। আমরা কৌস্তভের পাশে আছি। তার পরিবারকে রাত ৩টা থেকে ঘিরে রাখে পুলিশ। মনে হচ্ছিল কোনো উগ্রপন্থীকে গ্রেফতার করতে যাচ্ছে। পথে নেমে প্রতিবাদ করবে কংগ্রেস।

শনিবার বিকেলে ব্যাংকশাল আদালত তাকে এক হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেয়। জামিন পেয়েই আদালত চত্বর থেকে কৌস্তভ হুঁশিয়ারি দেন, এখনই আমি মাথার চুল কামাবো। যতদিন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে উৎখাত করতে পারব, ততদিন মাথায় চুল রাখব না। এরপরই আদালত চত্বরেই নাপিত ডেকে মাথা ন্যাড়া করতে বসে পড়েন কৌস্তভ।

একইসঙ্গে কৌস্তভ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে বাংলার মানুষ এবার আরও ভালোভাবে চিনল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাতের ঘুম কেড়ে নেবো। আরও কঠিন লড়াই আসছে। আদালতের লড়াইয়ে নাস্তানাবুদ করব। এটা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের জয়।’

শনিবার ভোররাতে হানা দিয়ে ব্যারাকপুরের বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কৌস্তভ বাগচীকে। গ্রেপ্তারের পর কৌস্তভকে ব্যাংকশাল আদালতে তোলা হয়। কৌস্তভের হয়ে লড়তে ব্যাংকশাল আদালতে হাজির হন প্রায় ১০০ আইনজীবী। কৌস্তভকে লকআপে রাখা যাবে না বলে দাবি জানান তারা এমনকি, তাকে কাঠগড়াতেও তোলা যাবে না বলে দাবি জানাতে থাকেন আইনজীবীরা। যাকে কেন্দ্র করে এদিন এজলাসে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

আদালতে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, কৌস্তভের মন্তব্যে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে হিংসা ছড়িয়েছে। সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি। কী কারণে তিনি এই কাজ করেছেন, তা জানা দরকার। সেজন্য কৌস্তভকে ১০ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন।

কৌস্তভের আইনজীবীরা বলেন, কোথায় সংঘর্ষ হয়েছে? কে আহত হয়েছে? তাদের কোথায় চিকিৎসা হয়েছে? কে গ্রেফতার হয়েছে? যে সংঘর্ষে কেউ গ্রেপ্তার হল না তাতে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে কাউকে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে?

কৌস্তভের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, মাঝরাতে আইনজীবীকে তুলে আনার অধিকার পুলিশকে কে দিয়েছে? সে কি কোনো সন্ত্রাসমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত? কৌস্তভ একটি বইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর অতীতের কথা বলা আছে। সেই বই এখনও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সেই বই সরকার নিষিদ্ধ করেনি। কেন ৪১ ধারায় নোটিশ না করে মাঝরাতে হাজির হল পুলিশ? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে কেন গভীর রাতে পুলিশ বাড়িতে ঢুকল। এরপর কোনও বিচারক মুখ্যমন্ত্রী বা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বললে তার বাড়িতেও পুলিশ ঢুকে যাবে।

চুলহীন মাথায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর উদ্দেশ্যে কৌস্তভ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার সরকারকে আদালতের লড়াইয়ে নাস্তানাবুধ করবো। এ গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের জয়। আজ আবার মুখ্যমন্ত্রীকে বাংলার মানুষ আরও একবার ভালোভাবে চিনলো।

এছাড়া বেফাঁস মন্তব্যের জন্য মমতার কাছে ক্ষমা চাইবেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হয় তার কাছে। এর জবাবে কৌস্তভ বাগচী বলেছেন, যদি মমতা পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কাছে ক্ষমা চান, তবে তিনিও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা ভাববেন।

গত ২ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের সাগরদিঘিতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই আসনের বিধায়ক ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সুব্রত সাহা। তিনি মৃত্যুবরণ করলে আসনটি শূন্য হয়ে যায়।

ওই নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী জয়ী হওয়ার পর কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেন মমতা ব্যানার্জি। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বাক্য বিনিময় হয়।

ওই আসনের উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে হারিয়ে দেন কংগ্রেসের বাইরণ বিশ্বাস। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরই মমতা ঘোষণা দেন, তিনি আর কোনো বিরোধী-জোট গড়বেন না। এর বদলে ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এককভাবে লড়াই করবেন। সূত্র: আনন্দবাজার।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আদালতে মাথা ন্যাড়া করে মমতাকে হুঁশিয়ারি আইনজীবী কৌস্তভের

আপডেট সময় : ০১:৫৯:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ মার্চ ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন কংগ্রেস নেতা আইনজীবী কৌস্তুভ বাগচি। বারাকপুরের বাসা থেকে শুক্রবার (৩ মার্চ) সকাল ৮টায় কৌস্তুভকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার গভীর রাতে কৌস্তুভের বারাকপুরের বাড়িতে যায় তারা। ৫ ঘণ্টা পর সকাল ৮টায় গ্রেফতার করা হয় তাকে।

কৌস্তভের মন্তব্যের ভিত্তিতে বড়তলা থানায় লিখিত অভিযোগের কারণেই এই গ্রেফতার বলে জানায় বাহিনীটি। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩, ৫০৪, ৫০৫, ৫০৬, ৫০৯, ৩৫৪ এ এবং ১২০বি ধারায় আইনজীবী ও কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচীকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

এ দিন এক হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে কৌস্তুভকে জামিন দেয় ব্যাঙ্কশাল আদালত। এরপরেই আদালতের বাইরে এসে মাথা ন্যাড়া করেন তিনি। এ সময় কৌস্তুভের পাশে ছিলেন কংগ্রেস এবং বাম আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। আমরা কৌস্তভের পাশে আছি। তার পরিবারকে রাত ৩টা থেকে ঘিরে রাখে পুলিশ। মনে হচ্ছিল কোনো উগ্রপন্থীকে গ্রেফতার করতে যাচ্ছে। পথে নেমে প্রতিবাদ করবে কংগ্রেস।

শনিবার বিকেলে ব্যাংকশাল আদালত তাকে এক হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেয়। জামিন পেয়েই আদালত চত্বর থেকে কৌস্তভ হুঁশিয়ারি দেন, এখনই আমি মাথার চুল কামাবো। যতদিন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে উৎখাত করতে পারব, ততদিন মাথায় চুল রাখব না। এরপরই আদালত চত্বরেই নাপিত ডেকে মাথা ন্যাড়া করতে বসে পড়েন কৌস্তভ।

একইসঙ্গে কৌস্তভ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে বাংলার মানুষ এবার আরও ভালোভাবে চিনল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাতের ঘুম কেড়ে নেবো। আরও কঠিন লড়াই আসছে। আদালতের লড়াইয়ে নাস্তানাবুদ করব। এটা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের জয়।’

শনিবার ভোররাতে হানা দিয়ে ব্যারাকপুরের বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কৌস্তভ বাগচীকে। গ্রেপ্তারের পর কৌস্তভকে ব্যাংকশাল আদালতে তোলা হয়। কৌস্তভের হয়ে লড়তে ব্যাংকশাল আদালতে হাজির হন প্রায় ১০০ আইনজীবী। কৌস্তভকে লকআপে রাখা যাবে না বলে দাবি জানান তারা এমনকি, তাকে কাঠগড়াতেও তোলা যাবে না বলে দাবি জানাতে থাকেন আইনজীবীরা। যাকে কেন্দ্র করে এদিন এজলাসে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

আদালতে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, কৌস্তভের মন্তব্যে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে হিংসা ছড়িয়েছে। সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি। কী কারণে তিনি এই কাজ করেছেন, তা জানা দরকার। সেজন্য কৌস্তভকে ১০ মার্চ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন।

কৌস্তভের আইনজীবীরা বলেন, কোথায় সংঘর্ষ হয়েছে? কে আহত হয়েছে? তাদের কোথায় চিকিৎসা হয়েছে? কে গ্রেফতার হয়েছে? যে সংঘর্ষে কেউ গ্রেপ্তার হল না তাতে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে কাউকে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে?

কৌস্তভের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, মাঝরাতে আইনজীবীকে তুলে আনার অধিকার পুলিশকে কে দিয়েছে? সে কি কোনো সন্ত্রাসমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত? কৌস্তভ একটি বইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর অতীতের কথা বলা আছে। সেই বই এখনও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সেই বই সরকার নিষিদ্ধ করেনি। কেন ৪১ ধারায় নোটিশ না করে মাঝরাতে হাজির হল পুলিশ? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে কেন গভীর রাতে পুলিশ বাড়িতে ঢুকল। এরপর কোনও বিচারক মুখ্যমন্ত্রী বা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বললে তার বাড়িতেও পুলিশ ঢুকে যাবে।

চুলহীন মাথায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর উদ্দেশ্যে কৌস্তভ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার সরকারকে আদালতের লড়াইয়ে নাস্তানাবুধ করবো। এ গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের জয়। আজ আবার মুখ্যমন্ত্রীকে বাংলার মানুষ আরও একবার ভালোভাবে চিনলো।

এছাড়া বেফাঁস মন্তব্যের জন্য মমতার কাছে ক্ষমা চাইবেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হয় তার কাছে। এর জবাবে কৌস্তভ বাগচী বলেছেন, যদি মমতা পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কাছে ক্ষমা চান, তবে তিনিও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা ভাববেন।

গত ২ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের সাগরদিঘিতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই আসনের বিধায়ক ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সুব্রত সাহা। তিনি মৃত্যুবরণ করলে আসনটি শূন্য হয়ে যায়।

ওই নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী জয়ী হওয়ার পর কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেন মমতা ব্যানার্জি। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বাক্য বিনিময় হয়।

ওই আসনের উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে হারিয়ে দেন কংগ্রেসের বাইরণ বিশ্বাস। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরই মমতা ঘোষণা দেন, তিনি আর কোনো বিরোধী-জোট গড়বেন না। এর বদলে ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এককভাবে লড়াই করবেন। সূত্র: আনন্দবাজার।